rAhman, shAmsur [শামসুর রাহমান];
nirbAchita 100 kabitA [নির্বাচিত ১০০ কবিতা (nirbAchito 100 kobita) 100 selected poems]
Annyaprokash অন্যপ্রকাশ DhAkA, 2005/2008, 200 pages
ISBN 9848683399
topics: | poetry | bengali | bangladesh
This excellent collection of poems is sadly lacking any associated structure - no index of the first lines, no introductory essays, not even a biography.
-Biography and career--
Like many other noted bAnglA poets from either side of the partition, Rahman (1929-2006) was a student of English literature, though he never completed his masters' at Dhaka University. Since 1957 he has been working as a journalist and in radio, both in English and in Bangla.
His first volume of poetry, pratham gAn, dvitIya mrityur Age (প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, (First song, before a second death) was published in 1960 (ফাল্গুন ১৩৬৬); see রুপালি স্নান (rUpAli snAn), আত্মজীবনীর খসড়া (AtmajIbaner khasRA)], কোনো পরিচিতাকে (kono parichitAke). Subsequent volumes established his repuptation:
* roudra karoTite রৌদ্র করোটিতে, 1963 - রবীন্দ্রনাথের প্রতি rabindranAth-er prati, - দুঃখ duHkha - পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ pArker niHsaMga khan~ja * biddhasta nilImA বিধ্বস্ত নিলীমা 1967 - যে আমার সহচর Je AmAr sahachar : (Ami ek kaMkAlke saMge niye hnATi) * nija bAsabhUme নিজ বাসভূমে, 1970 - poems forged in the flames of the bangladesh liberation movement - বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা - হরতাল (haratAl), - আসাদের শার্ট (AsAder shirt) Rahman published over sixty volumes of poetry. It is mainly his political poetry that is better known, and it is mostly these poems which are highlighted in this volume.
[from প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে 1960 ফাল্গুন ১৩৬৬] p.9 শুধু দু’টুকরো শুকনো রুটির নিরিবিলি ভোজ অথবা প্রখর ধু-ধু পিপাসার আঁজলা-ভরানো পানীয়ের খোঁজ শান্ত সোনালি আল্পনাময় অপরাহ্নের কাছে এসে রোজ চাইনি তো আমি। দৈনন্দিন পৃথিবীর পথে চাইনি শুধুই শুকনো রুটির টক স্বাদ আর তৃষ্ণার জল। এখনও যে শুই ভীরু-খরগোশ-ব্যবহৃত ঘাসে, বিকেলবেলায় কাঠবিড়ালীকে দেখি ছায়া নিয়ে শরীরে ছড়ায়,-সন্ধ্যা-নদীর আঁকাবাঁকা জলে মেঠো চাঁদ লিখে রেখে যায় কোনো গভীর পাঁচালি-দেখি চোখ ভরে; ঝিঁঝির কোরাসে স্তব্ধ, বিগত রাত মনে করে উন্মন-মনে হরিণের মতো দাঁতে ছিঁড়ি ঘাস হাজার যুগের তারার উৎস ঐ যে আকাশ তাকে ডেকে আনি হৃদয়ের কাছে, সোনালি অলস মৌমাছিদের পাখা-গুঞ্জনে জ্বলে ওঠে মন, হাজার-হাজার বছরের ঢের পুরোনো প্রেমের কবিতার রোদে পিঠ দিয়ে বসি, প্রগাঢ় মদের চঞ্চলা সেই রসে-টুপটুপ নর্তকী তার নাচের নূপুর বাজায় হৃদয়ে মদির শব্দে, ভরে ওঠে সুরে শূন্য দুপুর এখনও যে এই আমার রাজ্যে-এইটুকু ছিল গাঢ় প্রার্থনা- ঈশ্বর! যদি নেকড়ের পাল দরজার কোণে ভিড় করে আসে,- এইটুকু ছিল গাঢ় প্রার্থনা-তবুও কখনো ভুলব না, ভুলব না। ভাবিনি শুধুই পৃথিবীর বহু জলে রেখা এঁকে চোখের অতল হ্রদের আভায় ধূপছায়া মেখে গোধূলির রঙে একদিন শেষে খুঁজে নিতে হবে ঘাসের শয্যা। ছন্দে ও মিলে কথা বানানোর আরও কত তীক্ষ্ণ লজ্জা দৃষ্টিতে পুষে হাঁটি মানুষের ধূসর মেলায়! চোখ ঠেরে কেউ চলে যায় দূরে, কেউ সুনিপুণ গভীর হেলায় মোমের মতন চকচকে সুখী মুখ তুলে বলে এঁকেবেঁকে ‘ইশ, দিনরাত্তির মধুভুক সেজে পদ্য বানায়, ওহো, কী রাবিশ!’ আকাশের নিচে তুড়ি দিয়ে ওরা মারে কত রাজা, অলীক উজির হেসে-খেলে রোজ। তবু সান্ত্বনা আকাশ পাঠায় স্বর্গ-শিশির, জোনাকি-মেয়েরা বিন্দু-বিন্দু আলোর নূপুরে ভরে দেয় মাঠ গাঢ় রাত্তিরে বিষণ্ন সুরে তোমার রাজ্যে একা-একা হাঁটি আমি সম্রাট! শিশিরের জলে স্নান করে মন তুমি কি জানতে বিবর্ণ বহু দুপুরের রেখা মুছে ফেলে দিয়ে চলে যাবে এই পৃথিবীর কোনো রুপালি প্রান্তে? নোনাধরা মৃত ফ্যাকাশে দেয়ালে প্রেতছায়া দেখে, আসন্ন ভোরে দু’টুকরো রুটি না-পাওয়ার ভয়ে শীতের রাতেও এক-গা ঘুমেই বিবর্ণ হই, কোনো-একদিন গাঢ় উল্লাসে ছিঁড়ে খাবে টুঁটি হয়তো হিংস্র নেকড়ের পাল, তবু তুলে দিয়ে দরজায় খিল সত্তাসূর্যে যেসাসের ক্ষমা মেখে নিয়ে শুধু গড়ি উজ্জ্বল কথার মিছিল। হয়তো কখনো আমার ঠাণ্ডা মৃতদেহ ফের খুঁজে পাবে কেউ শহরের কোনো নর্দমাতেই,-সেখানে নোংরা পিছল জলের অগুনতি ঢেউ খাব কিছুকাল। যদিও আমার দরজার কোণে অনেক বেনামি প্রেত ঠোঁট চাটে সন্ধ্যায়, তবু শান্ত রুপালি স্বর্গ-শিশিরে স্নান করি আমি।
[from প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে 1960 ফাল্গুন ১৩৬৬] p.11 গলায় রক্ত তুলেও তোমার মুক্তি নেই হঠাৎ-আলোয় শিরায় যাদের আবির্ভাব, আসবেই ওরা ঝড়ের পরের পাখির ঢেউ। তাদের সুদূরে ফিরিয়ে দেবার মন্ত্র যদি জানতে, তবে কি প্রতি মুহূর্তে ব্যর্থতার কাদাবালি মেখে সত্তা তারায় আত্মজ্যোতি কখনো হারায়, লোকনিন্দার তীক্ষ্ম হুলে অচিরে বিদ্ধ অকালবৃদ্ধ সহজে ব’নে কেটে যেত কাল আকাশকুসুম জল্পনায়? তারা যাকে বলে সফলতা তার চিহ্ন তুমি সারা পথ হেঁটে এখনও কিছুই পাওনি খুঁজে সহজ তো নয় স্বর্গসিঁড়ির আশায় বাঁচা। যার দেখা পেয়ে চলতি পথের সূর্যোদয়ে মুগ্ধ তরুণ অমরত্বের মন্ত্র পেল, অচেনা মাঠের বিহ্বল থামে দাঁড়িয়ে একা পেতে চাও ঐ নদীর নিবিড় শ্রাবণে যাকে, ইচ্ছে-জোয়ারে ভেসে-ভেসে তুমি ট্রেনের পথে নেমে যাও সুখে হঠাৎ বেঠিক ইস্টিশনে খেয়ালি আশায় সন্ধানে যার দিনের শেষে গ্রামান্তে কোনো, তাকেই তো বলো সুন্দর, না? গোলকধাঁধায় তাকে খোঁজা ভার সত্য জেনো, তার জন্যেই জপেছ গানের কত-না কলি, পথ চেয়ে আছ সকল সময় প্রতীক্ষায় কে জানে কখন আসবে সে তার শ্রান্ত পায়ে- আসবে যেদিন কী দিয়ে বরণ করবে তাকে? তোমাকে দীর্ণ করে যারা আসে, প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো সৃজনী আভায় কামসুরভি ছড়ায় হৃদয়ে, কোটি জ্যোতিকণা বিলায় মনে, সমস্ত রাত একা-একা ঘরে চার-দেয়ালে মাথা খুঁড়ে তুমি মরছ যাদের প্রতীক্ষায় চিনেছ তাদের বহুবার তবু কেন যে এই লগ্নে রক্তে কুমারীর ভীরু চঞ্চলতা, আসবেই ওরা-পারবে না তুমি ফেরাতে আর। ভেবেছ কখনো সুরের সভায় আসন পাওয়া সম্ভব হবে? এই যে ছড়ানো কথার কালো দুরাশায় আজও জোনাকি-জীবন, কখনো তারা দূরের শরতে স্মৃতিগন্ধার পাবে কি আলো? এ-কথা কখনো জানবে না তবু মৃত্যু হবে। শহর জেগেছে, দূরে ঘণ্টায় প্রাণের ধ্বনি, রোগীর শরীরে নামল নিদ্রা হাসপাতালে, যারা কোনো দিন ভুলেও পেল না আপন জন ছেঁড়াখোঁড়া সেই কজন রাতের জুয়োশেষের ক্লান্তিতে ফের ভিড়ল ধোঁয়াটে রেস্তোরাঁয়। আস্তাবলের সহিস ঘোড়ার পিঠ বুলোয়, শীতের শুকনো ডালের মতোই ভিস্তি বুড়ো কেঁপে-কেঁপে তার জল-মসৃণ মশক বয়; পথের কুকুর হাই তুলে চায় ধুলোয়, কেউ জানল না ভোর ফুটল তরুণ ফুলের মতো, খণ্ডিতা নারী এখনও আলোর আলিঙ্গনে। আজও আছে চিরকস্তুরীটুকু লুকোনো মনে সেই সৌরভে উন্মন তুমি, তখন জানি দেয়ালে তোমার কাঠকয়লার আঁচড় পড়ে।
[from প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে 1960 ফাল্গুন ১৩৬৬] p.13 জানতাম একদা তোমার চোখে জারুলের বন ফেলেছে সম্পন্ন ছায়া, রাত্রির নদীর মতো শাড়ি শরীরের চরে অন্ধকারে জাগিয়েছে অপরূপ রৌদ্রের জোয়ার কত। সবুজ পাতায় মেশা টিয়ে তোমার ইচ্ছার ফল লাল ঠোঁটে বিঁধে নিয়ে দূরে চরাচরে আত্মলোপী অলীক নির্দেশে। শাশ্বত সে বৃক্ষের গৌরবে তুমি দিয়েছ স্বামীকে দীপ্ত কামের মাধবী শিশুকে সুপুষ্ট স্তন। দাম্পত্য প্রণয়ে সোহাগিনী প্রেমিকার মতো হৃদয়ের অন্তহীন জলে, ঢেউয়ে খর বাসনাকে ধুয়ে দান্ত সাধকের ধ্যানে তবু গড়েছ সংসার। প্রত্যহের দীপে তুমি তুলে ধরো আত্মার গহন নিঃসঙ্গতা, নকশি-কাঁথা-বোনা রাতে স্বপ্নের প্রভায় জ্বলো। তোমার সত্তায় কী উজ্জ্বল নিঃশঙ্ক অপ্রতিরোধ্য ফল জ্বলে, স্বর্গের সম্ভার। এবং এখন জানি করুণ কাঠিন্য ভরা হাতে আত্মায় নিয়েছ তুলে নগরের ফেনিল মদিরা, আবর্তে আবর্তে মত্ত কাম, প্রাণে স্থির অন্ধ গলি। হে বহুবল্লভা তুমি আজ কড়ায় ক্রান্তিতে শুধু গুনে নাও নিষ্কাশিত যৌবনের অকুণ্ঠ মজুরি। রূপের মলম মেখে সুচতুর মোমের ঊরুর মদির আগুনে জ্বেলে পুরুষের কবন্ধ বিনোদ কখনো জানিনি আগে এত ক্লান্ত, এত ক্লান্ত তুমি।
[from রৌদ্র করোটিতে 1963 আষাঢ় ১৩৭০] p.14 আমাদের বারান্দায় ঘরের চৌকাঠে কড়িকাঠে চেয়ারে টেবিলে আর খাটে দুঃখ তার লেখে নাম। ছাদের কার্নিশ, খড়খড়ি ফ্রেমের বার্নিশ আর মেঝের ধুলোয় দুঃখ তার আঁকে চকখড়ি এবং বুলোয় তুলি বাঁশি-বাজা আমাদের এই নাটে। আমাদের একরত্তি উঠোনের কোণে উড়ে-আসা চৈত্রের পাতায় পাণ্ডুলিপি বই ছেঁড়া মলিন খাতায় গ্রীষ্মের দুপুরে ঢক্ঢক্ জল-খাওয়া কুঁজোয় গেলাশে, শীত-ঠকঠক রাত্রির নরম লেপে দুঃখ তার বোনে নাম অবিরাম। পিরিচ চামচ আর চায়ের বাটিতে রোদ্দুরের উল্কি-আঁকা উঠোনের আপন মাটিতে দুঃখ তার লেখে নাম। চৌকি, পিঁড়ি শতরঞ্জি চাদর মশারি পাঞ্জাবি তোয়ালে লাল কস্তাপেড়ে শাড়ি প্রখর কম্বল আর কাঁথায় বালিশে ঝাপসা তেলের শিশি টুথব্রাশ বাতের মালিশে দুঃখ তার লেখে নাম। খুকির পুতুলরানী এবং খোকার পোষমানা পাখিটার ডানা মুখ-বুজে-থাকা সহধর্মিণীর সাদা শাড়ির আঁচলে দুঃখ তার ওড়ায় পতাকা। পায়ে-পায়ে-ঘোরা পুষি-বেড়ালের মসৃণ শরীরে ছাগলের খুঁটি আর স্বপ্নের জোনাকিদের ভিড়ে বৃষ্টি-ভেজা নিবন্ত উনুনে আর পুরানো বাড়ির রাত্রিমাখা গন্ধে আর উপোসী হাঁড়ির শূন্যতায় দুঃখ তার লেখে নাম। হৃদয়ে-লতিয়ে-ওঠা একটি নিভৃততম গানে সুখের নিদ্রায় কিবা জাগরণে, স্বপ্নের বাগানে, অধরের অধীর চুম্বনে সান্নিধ্যের মধ্যদিনে আমার নৈঃশব্দ আর মুখর আলাপে স্বাস্থ্যের কৌলিন্যে ক্রূর যন্ত্রণার অসুস্থ প্রলাপে, বিশ্বস্ত মাধুর্যে আর রুক্ষতার সুতীক্ষ্ম সঙ্গিনে দুর্বিনীত ইচ্ছার ডানায় আসক্তির কানায় কানায় বৈরাগ্যের গৈরিক কৌপীনে দুঃখ তার লেখে নাম। রৌদ্রঝলকিত ভাঙা স্তিমিত আয়নায় নববর্ষে খুকির বায়নায় আমার রোদ্দুর আর আমার ছায়ায় দুঃখ তার লেখে নাম। অবেলায় পাতে-দেয়া ঠাণ্ডা ভাতে বাল্যশিক্ষা ব্যাকরণ এবং আদর্শ ধারাপাতে ফুলদানি, বিকৃত স্লেটের শান্ত মেঘলা ললাটে আর আদিরসাত্মক বইয়ের মলাটে চুলের বুরুশে চিরুনির নম্র দাঁতে দুঃখ তার লেখে নাম। কপালের টিপে, শয্যার প্রবাল দ্বীপে, জুতোর গুহায় আর দুধের বাটির সরোবরে বাসনার মণিকণ্ঠ পাখিডাকা চরে দুঃখ তার লেখে নাম। বুকের পাঁজর ফুসফুস আমার পাকস্থলিতে প্লীহায় যকৃতে আর অন্ত্রের গলিতে দুঃখ তার লেখে নাম। আমার হৃৎপিণ্ডে শুনি দ্রিমিকি দ্রিমিকি দ্রাক্ দ্রাক্ দুঃখ শুধু বাজায় নিপুণ তার ঢাক। ঐ জীমরতিভরা পিতামহ ঘড়ির কাঁটায় বার্ধক্য-ঠেকানো ছড়ি, পানের বাটায় গোটানো আস্তিনে দুমড়ানো পাৎলুনে কাগজের নৌকা আর রঙিন বেলুনে দুঃখ তার লেখে নাম। কখনো না-দেখা নীল দূর আকাশের মিহি বাতাসের সুন্দর পাখির মতো আমার আশায় হৃদয়ের নিভৃত ভাষায় দুঃখ তার লেখে নাম।
[from রৌদ্র করোটিতে 1963 আষাঢ় ১৩৭০] p.17 পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ চেয়েছে চাঁদের কাছে বুঝি একটি অদ্ভুত স্বপ্ন তাই রাত্রি তাকে দিল উপহার বিষাদের বিস্রস্ত তনিমা যেন সে দুর্মর কাপালিক চন্দ্রমার করোটিতে আকণ্ঠ করবে পান সুতীব্র মদিরা পৃথিবীতে সম্পন্ন গাছের পাতা ঝরে হরিণের কানের মতন পাতা ঝরে ধ্বনি ঝরে উজ্জ্বল মাছের রুপালি আঁশের মতো ধ্বনি ঝরে ঝরে ধ্বনি ঝরে পৃথিবীতে সে ধ্বনির আকাঙ্ক্ষায় জ্ব’লে ততদিন সে-ও থাকবে পথের প্রান্তে প্রতীক্ষার ঘাটে যতদিন সহজে ভাসানো চলে সোনার কলস রৌদ্রের দস্যুতা জেনে বৃষ্টির আঁচড়ে মুহ্যমান দুঃখের দর্পণে দেখে মুখ বাসি রুটি চিবোয় অভ্যাসবশে জ্যোৎস্নাজ্বলা দাঁতে আর স্মৃতিগুলি একপাল কুকুরের মতো খিঁচিয়ে ধারালো দাঁত মনের পিছনে করে তাড়া ভাবে একতাল শূন্যতায় ভাবে বেহেস্তের ছবি যায় কশাই চামার ছুতোর কামার আর মুটে মজুরের ঘরে আর দরবেশের গুহায় বাদশার হারেমে সুন্দরী বাঁদী যদি বিলাসের কামনার খাদ্য হয় সোহাগ জোগায় বিলোল অধরে গড়ায় ক’ফোঁটা পানি ক্ষুধিত পাষাণে অথবা নুলোর বউ কাঁদে ভাদ্রের দুপুরে তবে যে লোকটা হেঁটে যায় বিকেলের মোলায়েম রোদে তার কীবা এসে যায় অন্যের দুঃখের নদী বয়ে যেতে দেখে আমরা সবাই কম বেশি স্বস্তির হাওয়ায় ভাসি নিজের ফাঁড়ার কথা ভেবে একচ্ছত্র ক্ষুধার সাম্রাজ্যে ঘুরে ঘুরে ধুলো ঘেঁটে ছাই ছেনে হৈ হৈ ছেলেদের দৌরাত্ম্যে অস্থির ফিরে আসে পার্কে এই নিরানন্দ বাদামের খোসা ভবঘুরে কাগজের অভ্যস্ত জগতে যেখানে অনামি বাউণ্ডুলে ময়লা ভিখিরি আর লম্পট জোচ্চোর গণ্ডমূর্খ আর ভণ্ড ফকির অথবা অর্ধনগ্ন ভস্মমাখা উন্মাদিনী বেহেড মাতাল এসে জোটে সন্ধ্যার আড়ালে যখন কোথাও রজনীগন্ধার ডালে কাগজের মতো চাঁদ বোনে স্বপ্নের রুপালি পাড় অর্ধদগ্ধ বিড়িটাকে শুকনো ঠোঁটে চেপে তাকায় রাস্তার ধারে চাঁদহীন মাঠে অদ্ভুত বিকৃত মুখে যেন পৃথিবীর কোনো সত্যে সৌন্দর্যে কল্যাণে আস্থা নেই তার যেন একটি কর্কশ পাখি আত্মাকে ঠুকরে বলে তোমার বাগান নেই বলে রক্তিম গোলাপ আসবে না বিকলাঙ্গ স্বপ্নের অলিন্দে কোনো দিন জানে তার নেই ঠাঁই সুন্দরের কোলে নুলোর বউটা তবে তাকে থাক থাক এসব কথার বুজরুকি কখনো সাজে কি তার চালচুলো নেই যার এই দুনিয়ার ঘরে রোঁয়া-ওঠা কুকুরের সাহচর্য্যে গ্রীষ্মের গোধূলি হয়তো লাগবে ভালো রাত্রি এলে চাঁদ হয়তো অদ্ভুত স্বপ্ন দেবে তার সত্তার মাটিতে বিষাদের ঘরে কেউ জাগাবে না তাকে পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জটাকে
[from রৌদ্র করোটিতে 1963 আষাঢ় ১৩৭০] p.21 লোকে বলে বাংলাদেশে কবিতার আকাল এখন, বিশেষত তোমার মৃত্যুর পরে কাব্যের প্রতিমা ললিতল্যাবণ্যচ্ছটা হারিয়ে ফেলেছে-পরিবর্তে রুক্ষতার কাঠিন্য লেগেছে শুধু, আর চারদিকে পোড়োজমি, করোটিতে জ্যোৎস্না দেখে ক্ষুধার্ত ইঁদুর কী আশ্বাসে চম্কে ওঠে কিছুতে বোঝে না ফণিমনসার ফুল। সুধীন্দ্র জীবনানন্দ নেই, বুদ্ধদেব অনুবাদে খোঁজেন নিভৃতি আর অতীতের মৃত পদধ্বনি সমর-সুভাষ আজ। অন্যপক্ষে আর ক’টি নাম ঝড়জল বাঁচিয়ে আসীন নিরাপদ সিংহাসনে, এবং সম্প্রতি যারা ধরে হাল বহতা নদীতে তাদের সাধের নৌকো অবেলায় হয় বানচাল হঠাৎ চড়ায় ঠেকে। অথবা কুসুমপ্রিয় যারা তারা পচা ফুলে ব’সে করে বসন্তের স্তব। যেমন নতুন চারা পেতে চায় রোদবৃষ্টি তেমনি আমাদেরও অমর্ত্যের ছিল প্রয়োজন আজীবন। তোমার প্রশান্ত রূপ ঝরেছিল তাই সূর্যমুখী চেতনার সৌরলোকে রাজনীতি প্রেমের সংলাপে। যেন তুমি রাজসিক একাকিত্বে-মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি-কখনো ফেলোনি দীর্ঘশ্বাস, যেন গ্রীষ্মে বোলপুরে হওনি কাতর কিংবা শুকনো গলায় চাওনি জল-অথবা শমীর তিরোধানে তোমার প্রোজ্জ্বল বুক হয়নিকো দীর্ণ কিংবা যেন মোহন ছন্দের মায়ামৃগ করেনি ছলনা কোনো- এমন মূর্তিতে ছিলে অধিষ্ঠিত সংখ্যাহীন প্রাণে। গোলাপের তীক্ষ্ণ কাঁটা রিলকের সত্তার নীলিমাকে ছিঁড়েছিল, তবু তাও ছিল স্নানাহার, চিরুণির স্পর্শ ছিল চুলে, ছিল মহিলাকে নিবেদিতপ্রাণ। আমার দিনকে তুমি দিয়েছ কাব্যের বর্ণচ্ছটা রাত্রিকে রেখেছ ভরে গানের স্ফুলিঙ্গে, সপ্তরথী কুৎসিতের ব্যূহ ভেদ করবার মন্ত্র আজীবন পেয়েছি তোমার কাছে। ঘৃণার করাতে জর্জরিত করেছি উন্মত্ত বর্বরের অট্রহাসি কী আশ্বাসে। প্রতীকের মুক্ত পথে হেঁটে চলে গেছি আনন্দের মাঠে আর ছড়িয়ে পড়েছি বিশ্বে তোমারই সাহসে। অকপট নাস্তিকের সুরক্ষিত হৃদয় চকিতে নিয়েছ ভাসিয়ে কত অমলিন গীতসুধারসে। ব্যাঙডাকা ডোবা নয়, বিশাল সমুদ্র হতে চাই এখনও তোমারই মতো উড়তে চেয়ে কাদায় লুটিয়ে পড়ি বারবার, ভাবি অন্তত পাঁকের কোকিলের ভূমিকায় সফলতা এলে কিছু সার্থক জনম।
[from নিজ বাসভূমে nija bAsabhUme 1970 ফাল্গুন ১৩৭৬] p.26 (alphabet, my sorrowful alphabet) নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছ আমার সত্তায়। মমতা নামের প্লুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে শিউলীশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ বলে মদনমোহন তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি, অবিচ্ছিন্ন, পরস্পর মমতায় লীন, ঘুরেছি কাননে তাঁর নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে। আজন্ম আমার সাথী তুমি, আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে, তাই তো ত্রিলোকে আ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে আমারই বন্দরে। গলিত কাচের মতো জলে ফাৎনা দেখে দেখে রঙিন মাছের। আশায় চিকন ছিপ ধরে গেছে বেলা। মনে পড়ে, কাঁচি দিয়ে নকশা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে সেই কবে আমি ‘হাসিখুশি’র খেয়া বেয়ে পৌঁছে গেছি রত্নদ্বীপে কম্পাস বিহনে। তুমি আসো, আমার ঘুমের বাগানেও সে কোন বিশাল গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে নেমে আসো, আসো কাঠবিড়ালির রূপে, ফুল্ল মেঘমালা থেকে চকিতে ঝাঁপিয়ে পড় ঐরাবত সেজে, সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ মুখের মতোই দুলে দুলে ওঠো তুমি বারবার কিংবা টুকটুকে লঙ্কা-ঠোঁট টিয়ে হয়ে কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়। আমার স অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা। যুদ্ধের আগুনে, মারীয় তাণ্ডবে, প্রবল বর্ষায় কি অনাবৃষ্টিতে, বারবনিতার নূপুর নিক্বণে, বনিতার শান্ত বাহুর বন্ধনে ঘৃণায় ধিক্কারে, নৈরাজের এলো- ধাবাড়ি চিৎকারে, সৃষ্টির ফাল্গুনে হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মীলিত সর্বক্ষণ জাগরণে। তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার? উনিশশো’ বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি বুকে নিয়ে আছ সগৌরবে মহীয়সী। সে-ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হলে আমার সত্তার দিকে কত নোংরা হাতের হিংস্রতা ধেয়ে আসে। এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি, এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউরের পৌষমাস! তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো, বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
[from নিজ বাসভূমে nija bAsabhUme 1970 ফাল্গুন ১৩৭৬] p.26 In 1968, 35 Bangla intellectuals including Sheikh Mujib were arrested for conspiring against Pakistan in the Agartala Conspiracy case. The entire "East Pakistan" was lit up by huge protest processions organized by student groups under the umbrella leadership of Maulana Bhashani. On 15 February 1969, one of the accused was shot dead in prison, leading to an immense conflagration. A number of buildings were burnt down, including the state guest house where the trial team was housed. The government were forced to abandon the trial. Sheikh Mujib and the others were released on February 22. In Pakistan, army chief Yahya Khan replaced General Ayub Khan in March. The poem is written from the perspective of a huge public rally, most likely the one held on 22 February in the Suhrawardy maidAn (then the Ramna race course grounds). look how the kriShNachuRA are blooming dense red on these streets of the city some days in the processions of protest some days walking by myself it seems as if these are not flowers but bubbles in the blood of the martyrs... the kriShNachuRAs of 21st February, the colour of our consciousness. এখানে এসেছি কেন? এখানে কী কাজ আমাদের? এখানে তো বোনাস ভাউচারের খেলা নেই কিংবা নেই মায়া কোনো গোল টেবিলের, শাসনতন্ত্রের ভেল্কিবাজি, সিনেমার রঙিন টিকিট নেই, নেই সার্কাসের নিরীহ অসুস্থ বাঘ, কসরৎ দেখানো তরুণীর শরীরের ঝলকানি নেই কিংবা ফানুস ওড়ানো তা-ও নেই, তবু কেন এখানে জমাই ভিড় আমরা সবাই? আমি দূর পলাশতলির হাড্ডিসার ক্লান্ত এক ফতুর কৃষক, মধ্যযুগী বিবর্ণ পটের মতো ধু-ধু, আমি মেঘনার মাঝি, ঝড়ুবাদলের নিত্য-সহচর, আমি চটকলের শ্রমিক, আমি মৃত রমাকান্ত কামারের নয়ন পুত্তলি, আমি মাটিলেপা উঠোনের উদাস কুমোর, প্রায় ক্ষ্যাপা, গ্রাম উজাড়ের সাক্ষী, আমি তাঁতি সঙ্গীহীন, কখনো পড়িনি ফার্সি, বুনেছি কাপড় মোটা-মিহি মিশিয়ে মৈত্রীর ধ্যান তাঁতে, আমি রাজস্ব দফতরের করুণ কেরানি, মাছি-মারা তাড়া-খাওয়া, আমি ছাত্র, উজ্জ্বল তরুণ, আমি নব্য কালের লেখক, আমার হৃদয়ে চর্যাপদের হরিণী নিত্য করে আসা-যাওয়া, আমার মননে রাবীন্দ্রিক ধ্যান জাগে নতুন বিন্যাসে এবং মেলাই তাকে বাস্তবের তুমুল রোদ্দুরে আর চৈতন্যের নীলে কতো স্বপ্ন-হাঁস ভাসে নাক্ষিত্রিক স্পন্দনে সর্বদা। আমরা সবাই এখানে এসেছি কেন? এখানে কী কাজ আমাদের? কোন সে জোয়ার করেছে নিক্ষেপ আমাদের এখন এখানে এই ফাল্গুনের রোদে? বুঝি জীবনেরই ডাকে বাহিরকে আমরা করেছি ঘর, ঘরকে বাহির। জীবন মানেই মাথলা মাথায় মাঠে ঝাঁ ঝাঁ রোদে লাঙল চালানো, জীবন মানেই ফসলের গুচ্ছ বুকে নিবিড় জড়ানো, জীবন মানেই মেঘনার ঢেউয়ে ঢেউয়ে দাঁড় বাওয়া পাল খাটানো হাওয়ায়, জীবন মানেই পৌষের শীতার্ত রাতে আগুনে পোহানো নিরিবিলি। জীবন মানেই মুখ থেকে কারখানার কালি মুছে বাড়ি ফেরা একা শিস দিয়ে, জীবন মানেই, টেপির মায়ের জন্যে হাট থেকে ডুরে শাড়ি কেনা, জীবন মানেই বইয়ের পাতায় মগ্ন হওয়া, সহপাঠিনীর চুলে অন্তরঙ্গ আলো তরঙ্গের খেলা দেখা, জীবন মানেই তালে তালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিলে চলা, নিশান ওড়ানো, অন্যায়ের প্রতিবাদে শূন্যে মুঠি তোলা, জীবন মানেই মায়ের প্রসন্ন কোলে মাথা রেখে শৈশবের নানা কথা ভাবা, জীবন মানেই খুকির নতুন ফ্রকে নকশা তোলা, চারু লেস বোনা, জীবন মানেই ভায়ের মুখের হাসি, বোনের নিপুণ চুল আঁচড়ানো, জীবন মানেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে একা আরোগ্য ভাবনা, জীবন মানেই গলির মোড়ের কলে মুখ দিয়ে চুমুকে চুমুকে জলপান, জীবন মানেই রেশনের দোকানের লাইনে দাঁড়ানো, স্ফুলিঙ্গের মতো সব ইস্তাহার বিলি করা আনাচে-কানাচে জীবন মানেই... ... ... ... ... ... ... আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরেথরে শহরের পথে কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়-ফুল নয়, ওরা শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর। একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রঙ। এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রঙ, যে রঙ লাগে না ভালো চোখে, যে-রঙ সন্ত্রাস আনে প্রাত্যহিকতায় আমাদের মনে সকাল-সন্ধ্যায়- এখন সে-রঙে ছেয়ে গেছে পথঘাট, সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা। আমি আর আমার মতোই বহু লোক রাত্রিদিন ভুলুণ্ঠিত ঘাতকের আস্তানায়, কেউ মরা, আধমরা কেউ কেউবা ভীষণ জেদী, দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়া। চতুর্দিকে মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ। বুঝি তাই উনিশশো ঊনসত্তরেও আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ, বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে। সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা। দেখলাম রাজপথে, দেখলাম আমরা সবাই জনসাধারণ দেখলাম সালামের হাত থেকে নক্ষত্রের মতো ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা আর বরকত বলে গাঢ় উচ্চারণে এখনও বীরের রক্তে দুখিনী মাতার অশ্রুজলে ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে হৃদয়ের হরিং উপত্যকায়। সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ, শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায়।
[from নিজ বাসভূমে nija bAsabhUme 1970 ফাল্গুন ১৩৭৬] p.34 This poem, written during the mass protests led by Abdul Hamid Khan Bhashani in 1969, has an iconic status in Bangladesh. Asad was martyred in the protest movement, and this poem is about his red shirt, and a hundred others that flame like it. The poem resonated with the muktijoddhas during the liberation war. গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের জলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়। বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো হৃদয়ের সোনালি তন্তুর সুক্ষ্মতায় বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে। ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট শহরের প্রধান সড়কে কারখানার চিমনি-চুড়োয় গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে উড়ছে, উড়ছে অবিরাম আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে, চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়। আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক; আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।
Like bunches of blood-red Oleander, Like flaming clouds at sunset Asad's shirt flutters In the gusty wind, in the limitless blue. To the brother's spotless shirt His sister had sown With the fine gold thread Of her heart's desire Buttons which shone like stars; How often had his ageing mother, With such tender care, Hung that shirt out to dry In her sunny courtyard. Now that self-same shirt Has deserted the mother's courtyard, Adorned by bright sunlight And the soft shadow' Cast by the pomegranate tree, Now it flutters On the city's main street, On top of the belching factory chimneys, In every nook and corner Of the echoing avenues, How it flutters With no respite In the sun-scorched stretches Of our parched hearts, At every muster of conscious people Uniting in a common purpose. Our weakness, our cowardice The stain of our guilt and shame- All are hidden from the public gaze By this pitiful piece of torn raiment Asad's shirt has become Our pulsating hearts' rebellious banner. [Translation by Syed Najmuddin Hashim, from http://mukto-mona.net/Articles/gopal_sengupta/shamsur_rahman.htm ]
(শহীদ কাদরীকে) প্রতিটি দরজা কাউন্টার কনুইবিহীন আজ। পা মাড়ানো, লাইনে দাঁড়ানো নেই, ঠেলাঠেলিহীন; মদ্রার রুপালি পরী নয় নৃত্যপরা শিকের আড়ালে অথবা নোটের তাড়া গাংচিলের চাঞ্চল্যে অধীর ছোঁয় না দেরাজ। পথঘাটে তাল তাল মাংসের উষ্ণতা সমাধিস্থ কর্পূরের বেবাক। মায়ের স্তনের নিচে ঘুমন্ত শিশুর মতো এ শহর অথবা রঁদার ভাবুকের মতো; দশটি বাঙ্ময় পঙ্ক্তি রচনার পর একাদশ পঙ্ক্তি নির্মাণের আগে কবির মানসে জমে যে-স্তব্ধতা, অন্ধ, ক্রুদ্ধ ক্ষিপ্র থাবা থেকে গা বাঁচিয়ে বুকে আয়াতের নক্ষত্র জ্বালিয়ে পাথরে কণ্টকাবৃত পথ বেয়ে ঊর্ণাজাল-ছাওয়া লুকানো গুহার দিকে যাত্রাকালে মোহাম্মদ যে-স্তব্ধতা আস্তিনের ভাঁজে একদা নিয়েছিলেন ভরে সে স্তব্ধতা বুঝি নেমেছে এখানে। রাজপথ নিদাঘের বেশ্যালয়, স্তব্ধতা সঙ্গিন হয়ে বুকে গেঁথে যায়; একটি কি দুটি লোক ইতস্তত প্রফুল্ল বাতাসে ওড়া কাগজের মতো ভাসমান। সবখানে গ্যাসোলিন পাইপ বিশুষ্ক, মানে ভীষণ অলস, হঠাৎ চমক লাগে মধ্যপথে নিজেরই নিঃশ্বাস শুনে আর কোথাও অদূরে ফুল পাপড়ি মেলে পরিস্ফুট শব্দ শুনি; এঞ্জিনের গহন আড়াল থেকে বহুদিন পর বহুদিন পর অজস্র পাখির ডাক ছাড়া পেল যেন। সুকণ্ঠ নিবিড় পাখি আজও এ শহরে আছে কখনো জানিনি আগে। ট্যুরিস্ট দু’চোখ বেড়ায় সবুজে সমাহিত মাঠে ছেলেদের ছায়ারা খেলছে এক গভীর ছায়ায়। কলকারখানায় তেজী ঘোড়াগুলো পাথুরে ভীষণ; ন্যাশনাল ব্যাংকের জানালা থেকে সরু পাইপের মতো গলা বাড়িয়ে সারস এ স্তব্ধতাকে খায়। শহর ঢাকার পথ ফাঁকা পেয়ে কত কী-যে বানালাম হেঁটে যেতে-যেতে বানালাম ইচ্ছেমতো আঙুলের ডগায় হঠাৎ একটি সোনালি মাছ উঠল লাফিয়ে, বড় হতে হতে গেল উড়ে দূরে কোমল উদ্যানে ভিন্ন অবয়ব খুঁজে নিতে অজস্র ফুলের বুদোয়ারে। হেঁটে যেতে যেতে বিজ্ঞাপন এই সাইনবোর্ডগুলো মুছে ফেলে সেখানে আমার প্রিয় কবিতাবলির উজ্জ্বল লাইন বসালাম; প্রতিটি পথের মোড়ে পিকাসো মাতিস আর ক্যান্ডিনিস্কি দিলাম ঝুলিয়ে। চৌরাস্তার চওড়া কপাল, এভেন্যুর গলি, ঘোলাটে গলির কটি, হরবোলা বাজারের গলা পাষাণপরীর রাজকন্যাটির মতো নিরুপম সৌন্দর্যে নিথর। স্তূপীকৃত জঞ্জালে নিষ্ক্রিয় রোদ বিড়ালছানা মৃদু থাবা দিয়ে কাড়ে রোদের আদর। জীবিকা বেবাক ভুলে কাঁচা প্রহরেই ঘুমায় গাছতলায়, ঠেলাগাড়ির ছায়ায় কিংবা উদাস আড়তে, ট্রলির ওপরে নিস্তরঙ্গ বাসের গহ্বরে, নৈঃশব্দের মসৃণ জাজিমে। বস্তুত এখন কেমন সবুজ হয়ে ডুবে আছে ক্রিয়াপদগুলি গভীর জলের নিচে কাছিমের মতো শৈবালের সাজঘরে। চকিতে বদলে গেছে আজ, আপাদমস্তক ভীষণ বদলে গেছে শহর আমার! [from নিজ বাসভূমে nija bAsabhUme 1970 ফাল্গুন ১৩৭৬]
from বন্দি শিবির থেকে bandi shibir theke 1972 p.39 [another classic, from the early days after the liberation of Bangladesh in 1971] স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা- স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা, স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত স্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল, স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। স্বাধীনতা তুমি রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশি। স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ-খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক, স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়া তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ। স্বাধীনতা তুমি চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ। স্বাধীনতা তুমি কালবোশেখীর দিগন্ত জোড়া মত্ত ঝাপটা। স্বাধীনতা তুমি শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক, স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন, স্বাধীনতা তুমি বোনের হাতে নম্র পাতায় মেহেদির রঙ। স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রঙা পোস্টার। স্বাধীনতা তুমি গৃহিণীর ঘন খোলা কালোচুলে, হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম। স্বাধীনতা তুমি খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা, খুকির অমন তুলতুলে গালে রৌদ্রের খেলা। স্বাধীনতা তুমি বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা, যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
from দুঃসময়ে মুখোমুখি duHsamaye mukhomukhi 1973 শ্রাবণ ১৩৮০ p. 52 [as in Asad's shirt, a white kurta becomes symbolic in this paean to bangladeshi freedom-fighter and rustic leader maulana bhasani (1880-1976). Shamsur Rahman was deeply involved in the movements of 1969 led by Bhashani. The poem is set at a rally addressed by Bhashani in post-independence Bangladesh, where his upraised hand flashes like a spear. his pAnjabi puffs out as if he would cover all the nation's woes with that white fabric... Bhashani commands immense respect in Bangladesh for never taking direct political posts and remaining free from the corruption that engulfed all its other leaders. ] শিল্পী, কবি, দেশী কি বিদেশী সাংবাদিক, খদ্দের, শ্রমিক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবিকা, নিপুণ ক্যামেরাম্যান, অধ্যাপক, গোয়েন্দা, কেরানি, সবাই এলেন ছুটে পল্টনের মাঠে, শুনবেন দুর্গত এলাকা-প্রত্যাগত বৃদ্ধ মৌলানা ভাসানী কী বলেন। রৌদ্রালোকে দাঁড়ালেন তিনি, দৃঢ়, ঋজু, যেন মহাপ্লাবনের পর নুহের গভীর মুখ সহযাত্রীদের মাঝে ভেসে ওঠে, কাশফুল-দাড়ি উত্তুরে হাওয়ায় ওড়ে। বুক তাঁর দক্ষিণ বাংলার শবাকীর্ণ হু-হু উপকূল, চক্ষুদ্বয় সংহারের দৃশ্যাবলিময়; শোনালেন কিছু কথা, যেন নেতা নন, অলৌকিক স্টাফ রিপোর্টার। জনসমাবেশে সখেদে দিলেন ছুঁড়ে সারা খাঁ-খাঁ দক্ষিণ বাংলাকে। সবাই দেখল চেনা পল্টন নিমেষে অতিশয় কর্দমাক্ত হয়ে যায়, ঝলছে সবার কাঁধে লাশ আমরা সবাই লাশ, বুঝিবা অত্যন্ত রাগী কোনো ভৌতিক কৃষক নিজে সাধের আপনকার ক্ষেত চকিতে করেছে ধ্বংস, প’ড়ে আছে নষ্ট শস্যকণা। ঝাঁকা-মুটে ভিখিরি, শ্রমিক, ছাত্র, সমাজসেবিকা, শিল্পী, কবি, বুদ্ধিজীবী, দেশী কি বিদেশী সাংবাদিক, নিপুণ ক্যামেরাম্যান, ফিরিঅলা, গোয়েন্দা, কেরানি, সমস্ত দোকান-পাট, প্রেক্ষাগৃহ, ট্রাফিক পুলিশ, ধাবমান রিকশা ট্যাক্সি, অতিকায় ডবল ডেকার, কোমল ভ্যানিটি ব্যাগ আর ঐতিহাসিক কামান, প্যান্ডেল টেলিভিশন, ল্যাম্পপোস্ট, রেস্তোরাঁ, ফুটপাত যাচ্ছে ভেসে, যাচ্ছে ভেসে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগরে। হায়, আজ একী মন্ত্র জপলেন মৌলানা ভাসানী! বল্লমের মতো ঝল্সে ওঠে তাঁর হাত বারবার অতি দ্রুত স্ফীত হয়, স্ফীত হয়, মৌলানার সফেদ পাঞ্জাবি, যেন তিনি ধবধবে একটি পাঞ্জাবি দিয়ে সব বিক্ষিপ্ত বেআব্রু লাশ কী ব্যাকুল ঢেকে দিতে চান।
from দুঃসময়ে মুখোমুখি duHsamaye mukhomukhi 1973 p.51 ‘কী আছে তোমার কাছে? বের করো চটপট’ বলে ক’জন উঠতি গুণ্ডা রাখল রিভলবার বুকের ওপর আচমকা, আমি প্রায় অকম্পিত স্বরে বললাম, ‘এই তো এখানে আমার বুকে শ্যামলিম শৈশবের নেবুতলা, নানান রঙের প্রজাপতি, হৈ-হৈ মেলা পাখির পেলব বাসা, কারো গাঢ় চুম্বনের রঙিন উষ্ণতা, উনিশ শো বেয়াল্লিশ, তেতাল্লিশ, দুর্ভিক্ষের ছায়া, ব্যক্তিগত নানাবিধ ক্ষুধা, এবং দ্বিতীয় বিশ্ব সময়কালীন ঝিকঝিক মালুম ইত্যাদি শব্দাবলি; আমার পাঁজরে বহু লাশ পলাশ রঙের বিভিন্ন মিছিল, শ্রাবণ-সন্ধ্যায় ভেজা করুণ শহর, আমার মুঠোয় কতো কান্না, নিয়নের ঝিকিমিকি এবং হিরোশিমার নিদারুণ লণ্ডভণ্ড ল্যান্ডস্কেপ, দ্বিখণ্ডিত বঙ্গ, সংখ্যাহীন উদ্বাস্তুর মুখ এবং আপনাদের পিস্তলের রঙেন মতন তীব্র হতাশা অথবা রঙিন শার্টের মতো আশা, কবিতার জন্যে অন্তহীন ভালোবাসা, শুনুন পকেটে অসমাপ্ত কবিতার পাণ্ডুলিপি, আইবুড়ো বোনের একটি চিঠি ছাড়া আর কিছু নেই। এসব ফালতু বস্তু আপনারা নেবেন কি করুণানিধান?’ হঠাৎ ছিটিয়ে থুতু আমার একান্ত নির্বিকার মুখে ওরা ধাঁ করে উধাও হল ঝাঁ-ঝাঁ ধোঁয়া ছেড়ে কালো জিপে। আমার ভেতর কিছু শব্দাবলি ম্যাজেশিয়ানের তাসের মতন নেচে নেচে কেবলি কবিতা হতে চায়। সটান নির্ভীক হেঁটে চলি পথ বক্ষলগ্ন অলৌকিক একটি তালিকা নিয়ে অলক্ষ্যে সবার।
p.57 ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা এবার আমি গোলাপ নেবো। গুলবাগিচা বিরান বলে, হরহামেশা ফিরে যাবো, তা হবে না দিচ্ছি বলে। ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা গোলাপ নেবো। ফিরতে হলে বেলাবেলি হাঁটতে হবে অনেকখানি। বুক-পাঁজরের ঘেরাটোপে ফুচ্কি মারে আজব পাখি। পক্ষী তুমি সবুর করো, শ্যাম-প্রহরে ডোবার আগে, একটু শুধু মেওয়া খাবো। শিরায় শিরায় এখনও তো রক্ত করে অসভ্যতা। বাচাল কণা খিস্তি করে, হাফ গেরস্ত প্রেমের টানে; হঠাৎ দেখি, চক্ষু টেপে গন্ধবণিক কালাচাঁদের, মিষ্টি মিষ্টি হ্রস্ব পরী। বিষ ছড়ালো কালনাগিনী বুকের ভেতর কোন্ সকালে। হচ্ছি কালো ক্রমাগত, অলক্ষুণে বেলা বাড়ে। সর্পিণী তুই কেমনতরো? বিষ-ঝাড়ানো রোজা ডেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হলো। ছিলাম পড়ে কাঁটাতারে বিদ্ধ হয়ে দিনদুপুরে, রাতদুপুরে, মানে আমি সব দুপুরে ছিলাম পড়ে। বাঁচতে গিয়ে চেটেছিলাম রুক্ষ ধুলো; জব্দ নিজের কষ-গড়ানো রক্তধারায়। ইতিমধ্যে এই মগজে, কয়খানা হাড় জমা হলো? ইতিমধ্যে এই হৃদয়ে, কয়খানা ঘর ধ্বংস হলো? শক্ত পাক্কা হিসাব পাওয়া। টোফ-ফর্দের পাতাগুলো কোন্ পাতালে নিমজ্জিত? তালসুপুরি গাছের নিচে, সন্ধ্যা নদীর উদাস তীরে, শান-বাঁধানে পথে পথে, বাস ডিপোতে, টার্মিনালে, কেমন একটা গন্ধ ঘোরে। আর পারি না, দাও ছড়িয়ে পদ্মকেশর বাংলাদেশে। ঘাতক তুমি সরে দাঁড়াও, এবার আমি লাশ নেবো না। নই তো আমি মুর্দাফরাশ। জীবন থেকে সোনার মেডেল, শিউলিফোটা সকাল নেবো। ঘাতক তুমি বাদ সেধো না, এবার আমি গোলাপ নেবো।
রুপালি স্নান (rUpAli snAn) [প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে 1960] 9 আত্মজীবনের খসড়া (Atmajibaner khasRA) [প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে] 11 galAy rakta tule_o tomAr mukti nei কোনো পরিচিতাকে (kono parichitAke) [প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে] 13 দুঃখ (duHkha) [রৌদ্র করোটিতে 1963] 14 পার্কের নিঃসঙ্গ খঞ্জ (parker niHsaMga kha~nja) [রৌদ্র করোটিতে] 17 আত্মপ্রকৃতি Ami to bideshi nai আমি তো বিদেশী নই রবীন্দ্রনাথের প্রতি (rabindranAth-er prati) [রৌদ্র করোটিতে] 21 বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা [নিজ বাসভূমে nija bAsabhUme 1970] 26 হরতাল (haratAl) [নিজ বাসভূমে] p.31 আসাদের শার্ট (AsAder shirt) [নিজ বাসভূমে] p.34 তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা 37 স্বাধীনতা তুমি svAdhInatA tumi [বন্দি শিবির থেকে bandi shibir theke 1972] পথের কুকুর 41 তুমি বলেধিলে 43 গেরিলা 45 এখানে দরজা ছিল 46 আক্রান্ত হ’য়ে (AkrAnta haye) [দুঃসময়ে মুখোমুখি] 51 সফেদ পাঞ্জাবি (safed pAnjAbi) [দুঃসময়ে মুখোমুখি duHsamaye mukhomukhi 1973] 52 দুঃসময়ে মুখোমুখি 53 ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা firiye nAo ghAtak knATA p.57 সেই উপত্যকায় 100 নিজের ছায়ার দিকে 104
http://www.guardian.co.uk/books/2006/sep/15/culture.obituaries Shamsur Rahman, the greatest Bengali poet of his generation, who has died aged 76, was a man of paradoxes. The author of more than 60 books of poems and many prose works, he gave in his writing an impression of effortless eloquence. Yet in speech he was hesitant, with a slight impediment. Although always willing to appear on public platforms and speak up for any number of progressive, secular, liberal and democratic causes, he never seemed fully at ease in that role. His poetry was frequently political, yet he was not by nature a political animal. He was international in his vision and range of poetic allusions, but rarely travelled outside Bangladesh and made no bid for publicity abroad. No poet has been more closely associated with the painful birth and perilous maturing of Bangladesh, the former East Pakistan, yet he resisted the mantle of "national poet". Unlike the majestic figure of Rabindranath Tagore (1861-1941), he was without vanity or affectation. Rahman was born in Dhaka, a city he loved and was always reluctant to leave. The fourth of 13 children, he gained an English degree from Dhaka University in 1953. From 1957 he made his living as a journalist in print and on Radio Pakistan, becoming editor of the government-owned daily newspaper Dainik Bangla (1977-87). Rahman often clashed with reactionary, undemocratic, or religious forces. Some of his most famous poems were powerful contributions to the campaign that began with the Bengali language movement of the 1950s, resisting the adoption of Urdu as the national language of East as well as West Pakistan, and culminated in Bangladesh's 1971 war of liberation from Pakistan. Asad's Shirt turns the tattered, blood-spattered shirt of a young demonstrator killed by the police into a banner of the freedom struggle. In Alphabet, My Sorrowful Alphabet, his love for his mother tongue reaches even to its letters, implying passionate rejection of the suggestion - by the Hamoodur Rahman commission in the mid-1960s - that Bengali would only be "integrated" into the Pakistani nation if it was written in Roman or Arabic script. But the break-up of Pakistan meant no respite in Bangladesh from the struggle for democracy, secularism and the rule of law, and Rahman never ceased to take part, supporting it with a stream of uncompromising poems. Risking his job as editor of Dainik Bangla, he joined protest rallies against President Hussain Muhammad Ershad in the 1980s, and characterised the corruption and misrule of that era in one poem as "the country riding a peculiar camel". The growth of Islamist extremism in Bangla- desh in the 1990s almost cost him his life: in 1999 three members of Harkatul Jihad burst into his apartment with axes, and would have killed him if his wife, Zohra Begum, had not stood in their way. As a poet, Rahman expressed an infinite variety of moods. He could turn out a perfect sonnet, but he preferred a freedom and flexibility of form that never, however, seemed uncontrolled. His vast vocabulary incorporated the Perso-Arabic influenced dialect of Old Dhaka as well as the Sanskrit tradition. His images could be fanciful, even surreal. He could be noble and classical in poems such as Telemachus or Electra's Song, erotic, as in Odalisque, or touchingly domestic, as in Some Lines on a Cat. The secular, often witty romanticism with which he began as a poet in the 1950s - and which at the time was not common among Muslim Bengali poets - never left him. Freedom of language and freedom of poetry are at the heart of everything he wrote. In Swadhinata Tumi (You, Freedom), written during the liberation war, he defines freedom in a series of images ranging from the heroic and political to the rural and intimate, ending with "You are a garden room, the koel-bird's song/ the old banyan tree's gleaming leaves/ my notebook of poems written just as I please." Rahman's death has produced an outpouring of tributes even from his ideological enemies. "A poet has no religion," he said in a 1993 interview with the Kolkata (formerly Calcutta) Statesman. "His true religion is to protest against anti-human activities. I believe in democracy." His balanced, rational, yet mercurial vision will itself spare him from being turned into an icon. His great poem Mask, translated by Kaiser Haq, ends with a plea against that. "Look! The old mask/ under whose pressure/ I passed my whole life,/ a wearisome handmaiden of anxiety, has peeled off at last./ For God's sake don't/ fix on me another oppressive mask." His wife, two daughters and one son survive him. Another son predeceased him. Osman Jamal writes: I first met Shamsur Rahman in 1949, the year that he joined the Progressive Writers and Artists Association. Loosely linked to the recently outlawed Communist party, the small group of youthful PWAA members usually held their literary meetings in the relative freedom of "Madhu's canteen" at Dhaka University. This teashop in a corrugated tin shed, supported on timber and bamboo pillars and open on three sides, lay abandoned on Sundays. There, Rahman read his first efforts to a fraternal but critical audience. He would have known some Eliot and Yeats by that point, but his first volume of poems, Prothom Gan Ditio Mrittur Age (First Song, Before the Second Death, eventually published in 1960), owes more to a schooling in the poetry of the first generation of Kolkata-centred modern Bengali poets of the 1930s. Though PWAA did not survive long into the 1950s, Rahman carried its spirit of enlightenment and modernity to the end of his life. Years later, he wrote a poem, Hasan and the Winged Horse, addressing a close friend from those times, the poet and essayist Hasan Hafizur Rahman, who had recently died. It looked back to, among other things, the language movement protest in Dhaka in 1952, when four students were killed on February 21. Do you remember today the trumpet of an irate goddess called politics? Remember sitting up all night Reading countless underground tracts? Remember the impatient kiss On 52's red lily of terrible beauty? Alone you went To the dark press to light up forbidden lamps And at the alleyway's head looking bright-eyed for a winged horse, I spent my evenings and so many midnights.
from http://www.nytimes.com/2006/08/19/obituaries/19rahman.html?_r=1&oref=slogin Mr. Rahman published more than 60 volumes of poetry, only a few of which have been translated into English. These include "The Best Poems of Shamsur Rahman," published last year in New Delhi; and "The Devotee, the Combatant: Selected Poems of Shamsur Rahman," published in 2000 in Dhaka. An outspoken opponent of religious fundamentalism, Mr. Rahman was attacked in January 1999 by a group of young men who talked their way into his house and tried to behead him with an ax. Mr. Rahman was unharmed, but his wife, who came to his aid, was seriously wounded. Hearing screams, neighbors rushed in and caught the attackers, who were members of Harkat-ul-Jihad-al-Islami, a militant Islamic group. The attack led to the arrest of 44 members of the group. [However, most were released. The leader was re-arrested in 2005 on a separate charge of attempting to murder Sheikh Hasina.]
Free thinkers targeted repeatedly http://www.thedailystar.net/top-news/free-thinkers-targeted-repeatedly-74621 March 30, 2015 In the last 16 years, deadly attacks aiming to kill were carried out on at least five [intellectuals] including [poets] Shamsur Rahman and Humayun Azad, and none of those incidents ended up with justice being served to the victims. On January 18, 1999, renowned poet Shamsur Rahman was attacked in his residence by militants of Harkat-ul Jihad. Though he was unharmed, his wife was badly hurt. Later, Mufti Hannan, commander of the militant outfit, confessed his outfit’s involvement in the crime and said their orders were to kill. Meanwhile, the attackers were allowed to walk free. On February 27, 2004, eminent writer Humayun Azad was brutally hacked near Bangla Academy while coming out of the Ekushey Book Fair. He survived the attack. The murder case is yet to be finished and deposition of testimony is still underway after 10 years. Last year, one of the accused, Salahuddin, escaped after a police van carrying 3 terrorists to court was ambushed] in filmy-style in Mymensingh’s Trishal upazila. Blogger and self-proclaimed atheist Asif Mohiuddin was stabbed by alleged militants in Uttara on January 14, 2013. He survived the vicious wounds. Two years have lapsed, but police are yet to press charges and now they say that the investigation is on the verge of completion.