kAdri, shahId [Śahīda Kādarī];
shahId Qadrir kabitA [shahId kAdari]
sAhitya prakAsha [Sāhitya prakāśa], 1993, 171 pages
ISBN 9844650062, 9789844650060
topics: | bengali | poetry | bangladesh
Shahid Qadri (also spelled Kadri), is one of the premier modern poets in the Bangla language. Born in Kolkata in 14 August, 1942, Kadri moved to Bangladesh during the partition. His earliest poetry started appearing in 1956, and his first volume, uttarAdhikAr was published in 1967. He was part of a small group of poets who would meet regularly - Syed Shamsul Haque, Shamsur Rahman, Fazal Shahabuddin and others (see interview). The tragedies and military excesses of the Bangladesh war (1971) coloured his poetry in the landmark volume tomAke abhibAdan, priyatamA (তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা, 1974).
His third volume, kothAo kono krandan nei, (কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই, 1978) was published after he returned from a four-year stay in Europe. After working as a journalist for some years, a sense that he was not recognized haunted him, and he moved to Boston in 1982. He has lived in the USA since then. A fourth volume of poetry was published after a gap of nearly thirty years AmAr chumban-gulo pouchhe dAo, (আমার চুম্বনগুলো পৌছে দাও, 2009).
In 2011, he was awarded the ekushey padak, one of Bangladesh's highest civilian awards.
সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর-ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটলো, চৌদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মত যেনবা মড়কে শহর উজাড় হবে, -– বলে গেল কেউ –- শহরের পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায় এবং হঠাৎ সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম! বজ্র-শিলাসহ বৃষ্টি, বৃষ্টি : শ্রুতিকে বধির ক’রে গর্জে ওঠে যেন অবিরল করাত-কলের চাকা, লক্ষ লেদ-মেশিনের আর্ত অফুরন্ত আবর্তন! নামলো সন্ধ্যার সঙ্গে অপ্রসন্ন বিপন্ন বিদ্যুৎ মেঘ, জল, হাওয়া, –- হাওয়া, ময়ুরের মতো তার বর্ণালী চিৎকার, কী বিপদগ্রস্ত ঘর-দোর, ডানা মেলে দিতে চায় জানালা-কপাট নড়ে ওঠে টিরোনসিরসের মতন যেন প্রাচীন এ-বাড়ি! জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় জনারণ্য, শহরের জানু আর চকচকে ঝলমলে বেসামাল এভিনিউ এই সাঁঝে, প্রলয় হাওয়ার এই সাঁঝে (হাওয়া যেন ইস্রাফিলের ওঁ) বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা, ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নীচু ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে দ্যাখে, – জল অবিরল জল, জল, জল তীব্র, হিংস্র খল, আর ইচ্ছায় কি অনিচ্ছায় শোনে ক্রন্দন, ক্রন্দন নিজস্ব হৃৎপিণ্ডে আর অদ্ভুত উড়োনচণ্ডী এই বর্ষার ঊষর বন্দনায় রাজত্ব, রাজত্ব শুধু আজ রাতে, রাজপথে-পথে বাউণ্ডুলে আর লক্ষ্মীছাড়াদের, উন্মূল, উদ্বাস্তু বালকের, আজীবন ভিক্ষুকের, চোর আর অর্ধ-উন্মাদের বৃষ্টিতে রাজত্ব আজ। রাজস্ব আদায় করে যারা, চিরকাল গুণে নিয়ে যায়, তারা সব অসহায় পালিয়েছে ভয়ে। বন্দনা ধরেছে, -– গান গাইছে সহর্ষে উৎফুল্ল আঁধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড, বাঁকা-চোরা টেলিফোন-পোল, দোল খাচ্ছে ওই উঁচু শিখরে আসীন, উড়ে-আসা বুড়োসুড়ো পুরোন সাইনবোর্ড তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা, পালিয়েছে ভয়ে। পালিয়েছে, মহাজ্ঞানী, মহাজন, মোসাহেবসহ অন্তর্হিত, বৃষ্টির বিপুল জলে ভ্রমণ-পথের চিহ্ন ধুয়ে গেছে, মুছে গেছে কেবল করুণ ক’টা বিমর্ষ স্মৃতির ভার নিয়ে সহর্ষে সদলবলে বয়ে চলে জল পৌরসমিতির মিছিলের মতো নর্দমার ফোয়ারার দিকে, –- ভেসে যায় ঘুঙুরের মতো বেজে সিগারেট-টিন ভাঙা কাচ, সন্ধ্যার পত্রিকা আর রঙিন বেলুন মসৃণ সিল্কের স্কার্ফ, ছেঁড়া তার, খাম, নীল চিঠি লন্ড্রির হলুদ বিল, প্রেসক্রিপশন, শাদা বাক্সে ওষুধের সৌখীন শার্টের ছিন্ন বোতাম ইত্যাদি সভ্যতার ভবিতব্যহীন নানাস্মৃতি আর রঙবেরঙের দিনগুলি এইক্ষণে আঁধার শহরে প্রভু, বর্ষায়, বিদ্যুতে নগ্নপায়ে ছেঁড়া পাৎলুনে একাকী হাওয়ায় পালের মতো শার্টের ভেতরে ঝকঝকে, সদ্য, নতুন নৌকার মতো একমাত্র আমি, আমার নিঃসঙ্গে তথা বিপর্যস্ত রক্তেমাংসে নূহের উদ্দাম রাগী গরগরে গলা আত্মা জ্বলে কিন্তু সাড়া নেই জনপ্রাণীর অথচ জলোচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসের স্বর, বাতাসে চিৎকার, কোন আগ্রহে সম্পন্ন হয়ে, কোন শহরের দিকে জলের আহ্লাদে আমি একা ভেসে যাবো? p.11
আমরা কাতারে-কাতারে দাঁড়িয়ে আছি ব্যক্তিগত দূরত্বে সবাই। নামহীন অহংকারে হলুদ একসার বিকৃত মুখ পরস্পর থেকে ফেরানো; হৃৎপিন্ডের মধ্যে লুকোনো নিতান্ত নিজস্ব কাঁচ, - সেখানেই উৎসুক ফিরে ফিরে তাকানো। কিন্তু সন্ধ্যার নির্বোধ হাওয়া জমিয়ে তুললো একটি সাধারণ পরিমল, -- এ যখন ও-র গন্ধে সজাগ, আমরা প্রত্যেকে ভ্রু-কুঁচকে যাই-যাই, তখনি সে এসে দাঁড়ালো স্কার্ট-ঢাকা সোনালি চুলের ইন্দ্রজালে দীর্ঘ, ঋজু ক্ষীণ ঊরূর বিদেশিনী আমরা তাকে ঘিরে ভিখিরির মত গুঞ্জন রটালাম।
অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো, গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নক্ষত্ররাজি, তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ, -চলে গেছি শব্দহীন ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর। দেয়ালে ছায়ার নাচ সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয় যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয় | p.25
গলা চিরে থুথু ফ্যালে দাপায় কপাট নড়বড়ে শ্বাসকষ্টে যা তা' প্রেম, ঠাণ্ডা হাওয়া হৃৎপিণ্ডে বিরক্তিকর উৎকট নর্তন অলৌকিক ইচ্ছা তার তাকে দিয়ে টেবিল বাজায় মাঝরাতে নিঃসঙ্গতা রাঙিয়ে টেবিলে একজোড়া লালচোখ, একটি লণ্ঠন বিশ শতকের সুন্দর সুগোল এক পেটের ভেতরে যেন দেখে নেয় প্রাক্তন প্রেমিকদের বিধ্বস্ত কবর চোখের সামনে রাতভর নীলরজ্জু এক মুকুতা দোলায় আর যেন তারার চুমকি-জ্বালা সেই অন্তর্বাস যথার্থই সৎচেষ্টায় খুলে দিয়ে আকাশ দেখায় খেলোয়াড়ের মতন একে-একে শূন্যতার সবগুলো ভাঁজ তার সামনে সর্পের বঙ্কিম, শান্ত চতুরালি, স্পষ্টত নিষ্পাপ ফোলা-গাল সাপুড়ের ভেঁপু একেবারে নির্ভয়, বিপদমুক্ত, হস্তের অব্যর্থ ফাঁদে দেয় গলা বাড়িয়ে প্রেমিকা ঝাঁপিতে আটকে রেখে বাতি-না-জ্বেলেই শোয়া যায়। এ হেন অনেক কিছু, একটু আয়াসে চিনেবাদামের খোসা ভাঙতে-ভাঙতে পার হওয়া যায় হে দীপ্ত প্রেমিক, বন্ধু, ভাই যথা শান্ত দুপুরে দেলাক্রোয়ার ক্রুদ্ধ, রুদ্ধ মত্ত অশ্বারোহী ট্রেনে-কাটা শূকরের লালরক্ত, মৃত্যু, আর্তনাদ! কিছুই শোনে না কেউ তলপেটে অনাস্বাদিত বিহ্বল কাম আত্মার ভেতরে ওড়ে নীলমাছি বিরক্তির, মগজে উদ্যান। দীর্ঘজীবী হোক তবু যেন তার সব স্বপ্নক্রীড়া মাঝরাতে যে কারণে হিমহস্ত টেবিল বাজায় p.28 also at facebook page
শাদা রাস্তা চ'লে গেছে বুকের মধ্যে শাদা রাস্তা চ'লে গেছে বুকের মধ্যে পাতার সবুজ সম্মিলিত কাঁচা শব্দে যে তোমাকে ডেকেছিলো 'রাধা', আধখানা তার ভাঙাগলা, আধখানা তার সাধা । p.76
কে যেন চিৎকার করছে প্রাণপণে `গোলাপ! গোলাপ!' ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে তার সুমসৃণ লালা, `প্রেম, প্রেম' বলে এক চশমা-পরা চিকণ যুবক সাইকেল-রিকশায় চেপে মাঝরাতে ফিরছে বাড়ীতে, `নীলিমা, নিসর্গ, নারী'- সম্মিলিত মুখের ফেনায় পরস্পর বদলে নিলো স্থানকাল, দিবস শর্বরী হলো সফেদ পদ্মের মতো সূর্য উঠলো ফুটে গোধূরির রাঙা হ্রদে এবং স্বপ্নের অভ্যন্তরে কবিদের নিঃসঙ্গ করুণ গণ্ডদেশে মহিলার মতো ছদ্মবেশে জাঁদরেল নপুংসক এক ছুড়ে মারলো সুতীক্ষ্ণ চুম্বন। p.79
আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায় ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায় সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়। শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি, দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ- রূপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়, মাংস, মাংস, মাংস... মাংসের ভেতরে শুধু দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি ... p.84
"The world owes me a million dollars" - Gregory Corso টাকাগুলো কবে পাবো? সামনের শীতে? আসন্ন গ্রীস্মে নয়? তবে আর কবে! বৈশাখের ঝড়ের মতো বিরূপ বাতাসে ঝরে পড়ছে অঝোরে মণি মাণিক্যের মতো মূল্যবান চুলগুলো আমার এদিকে- ওদিকে! এখনই মনি-অর্ডার না যদি পাঠাও হে সময়, হে কাল, হে শিল্প, তবে কবে? আর কবে? যখন পড়বে দাঁত, নড়বে দেহের ভিৎ ? দ্যাখো দ্যাখো, মেঘের তালি-মারা নীল শার্ট প’রে ফ্রিজিডেয়ার অথবা কোনো রেকর্ড প্লেয়ার ছাড়া খামোকা হুল্লোড় করতে করতে যারা পৌঁছে যায় দারুণ কার্পেটহীনভাবে কবিতার সোনালি তোরণে সেই সব হা-ঘরে, উপোসী ও উল্লুকদের ভীড়ে মিশে গিয়ে আমিও হাসছি খুব বিশ্ববিজয়ীর মতো মুখ করে। আমাকে দেখলে মনে হবে- গোপন আয়ের ব্যবস্থা ঠিকই আছে। -আছেই তো। অস্বীকার কখনো করেছি আমি হে কাল, হে শিল্প? ওরা জানে না এবং কোনোদিন জানবে না- পার্কের নি:সঙ্গ বেঞ্চ, রাতের টেবিল আর রজনীগন্ধার মতো কিছু শুভ্র সিগারেট ছাড়া কেউ কোনোদিন জানবে না -- ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক এক আমারও রয়েছে! ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামক বিশাল বাণিজ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ আমিও রেখেছি। তাছাড়া জীবনান্দ দাশ এবং সুধীন্দ্রনাথসহ ওসামু দাজাই আমাকে টাকা পয়সা নিয়মিতভাবে এখনও পাঠান বলতে পারো এ ব্যবসা বিশ্বব্যাপী -- একবার শার্ল বোদলেয়ার প্রেরিত এক পিপে সুরা আমি পেয়েছিলাম কৈশরে পা রেখে, রিল্কে পাঠিয়েছিলেন কিছু শিল্পিত গোলাপ (একজন প্রেমিকের কাছে আমি বিক্রি করেছি নির্ভয়ে) এজরা পাউন্ড দিয়েছিলেন অনেক ডলার রাশি রাশি থলে ভরা অসংখ্য ডলার (ডলার দিয়ে কিনেছি রাতের আকাশ) এবং একটি গ্রীক মুদ্রা (সে গ্রীক মুদ্রাটি সেই রাতের আকাশে নিয়মিত জ্বলজ্বল করে) অতএব কপর্দক-শূন্য আমি, কোনো পুণ্য নেই আমার বিব্রত অস্তিত্বের কাছে কেউ নয় ঋণী- এমন দারুণ কথা কি করে যে বলি! যেদিকে তাকাই পার্কে, পেভমেন্টে, আঁধারে, রাস্তায় রেস্তোরায়ঁ, ছড়ানো ছিটানো প্রজ্জ্বোল কবিতাগুলো চতুর্দিক থেকে উঠে এসে দুটো নিরপরাধ নরম বই হয়ে ইতিমধ্যে তোমাদের নোংরা অঙ্গুলির নীচে চলে গেলো, এই কি যথেষ্ট নয়? এতেই কি লক্ষ লক্ষ টাকা লেখা হলো না আমার নামে, পাওনা হলো না? হে সময়, হে কাল, হে শিল্প. হে বান্ধববৃন্দ, টাকাগুলো কবে পাবো, কবে, কবে, কবে? p.104
This love poem, set against a background of war, is possibly Shahid Kadri's best known poem. ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট করে চলে যাবে এবং স্যালুট করবে কেবল তোমাকে প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে ভায়োলিন বোঝাই করে কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো- বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা। ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা! সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে- আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর লাল নীল সোনালি মাছি- ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা। ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে গণচুম্বনের ভয়ে হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে, ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো স্টেটব্যাঙ্কে গিয়ে গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান। ভয় নেই, ভয় নেই ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা। p.111
we must love one another or die. - W.H. Auden না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয় -- যার চোখ,মুখ,নাক ঠুকরে খাবে তলোয়ার-মাছের দঙ্গল,সুগভীর জলের জঙ্গলে সমুদ্রচারীর বাঁকা দাঁতের জন্যে যে উঠছে বেড়ে, তাকে,হ্যাঁ,তাকে কেবল জিজ্ঞেস ক’রো,সেই বলবে না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়, ভেঙে-আসা জাহাজের পাটাতন নয়,দারুচিনি দ্বীপ নয়, দীপ্র বাহুর সাঁতার নয়; খড়খুটো? তা-ও নয়। ঝোড়ো রাতে পুরোনো আটাচালার কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে কোনো এক গাড়ি বারান্দার ছাঁট-লাগা আশ্রয়টুকুও নয় | ফুসফুসের ভেতর যদি পোকা-মাকড় গুঞ্জন ক’রে ওঠে না, প্রেম তখন আর শুশ্রূষাও নয়; সর্বদা, সর্বত্র পরাস্ত সে; মৃত প্রেমিকের ঠান্ডা হাত ধ’রে সে বড়ো বিহ্বল,হাঁটু ভেঙে-পড়া কাতর মানুষ। মাথার খুলির মধ্যে যখন গভীর গূঢ় বেদনার চোরাস্রোত হীরকের ধারালো- ছটার মতো ব’য়ে যায়,বড়ো তাৎপর্যহীন হ’য়ে ওঠে আমাদের ঊরুর উত্থান,উদ্যত শিশ্নের লাফ,স্তনের গঠন। মাঝে মাঝে মনে হয় শীতরাতে শুধু কম্বলের জন্যে, দুটো চাপাতি এবং সামান্য শব্জীর জন্যে কিংবা একটু শান্তির আকাঙ্খায়,কেবল স্বস্তির জন্যে বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরের কাছে অনায়াসে বিক্রি ক’রে দিতে পারি -- অবশ্যই পারি। কিন্তু এখন,এই মুহুর্তে, এই স্বীকারোক্তির পর মনে হলো: হয়তো বা আমি তা পারি না -- হয়তো আমি তা পারবো না। p. 119
(অমিয় চক্রবর্তী, শ্রদ্ধাস্পদেষু) বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ, কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না... একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো, পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না... ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীলগাই, গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ মেয়েলি গানের- তোমরা দু'জন একঘরে পাবে ঠাঁই প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না... p.120
একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে, রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো হেলায়-ফেলায় পড়ে থাকে কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না, কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না; কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া, মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে একটা সবুজ টিয়ে, ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির এবং পাখির প্রস্রাব; সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায় সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার প্রথম সহজ রঙ হেলায়-ফেলায় কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না, কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না || p.136
আজ আবার আমার ইচ্ছা হলো যাই বর্ধমানে, সেই একটুখানি ইস্টিশনে, হাই তুলতে তুলতে যাই বটগ্রামে শিউলিতলায় যেখানে দাঁড়িয়ে আমি কোনওদিন ফটোগ্রাফ তুলি নাই হে আমার মোরগের চোখের মতন খুব ছেলেবেলা ! চলো তাকে তুলে আনি, তবু বলো আগে কেন আনি নাই ? অথচ স্বপ্নের মধ্যে শিউলি-গাছের মতো আমার মা দারুন সুগন্ধ সঙ্গে নিয়ে একনও দাঁড়িয়ে টান দেন কনিষ্ঠ আঙুল। কপিকলে উঠে-আসা মধ্যাহ্নে কুয়োর ঠাণ্ডা পানি আমাকে আবার তুলে দ্যায় নতুন শরীর ধরে সেই সুপ্রাচীন সাঁওতাল। তার ছবি নেই কেন এ্যালবামে ? সে কি শিমুলের মতো উড়ে চলে গেছে শালবনে ? কণ্ঠ তার মহুয়ায় মাদলের বোলে, জন্মে-জন্মে, অন্য কোনও জন্মান্তরে জাগ্রত হবে না আর ? যদি হয়, আজ তাই যা কিছু এড়িয়ে গেছি, আড়ালে রেখেছি আমার নিজের মধ্যে, কবিতার ক্লান্ত শব্দে, বারবার ফিরিয়ে আনতে চাই। আজ আবার আমার ইচ্ছে হলো যাই, এই রঙ-বেরঙের শার্ট-জামা-জুতো, মাছ থেকে মাছের আঁশের মতো কৌশলে ছাড়াই ... যাই ... একটি নতুন নম্র বীজ হয়ে, বকুল অথবা চামেলীর ছদ্মবেশে এক্কেবারে শব্দহীন চলে যাই। p.150
(মাহবুব হাসান-কে) শালিক নাচে টেলিগ্রাফের তারে, কাঁঠালগাছের হাতের মাপের পাতা পুকুর পাড়ে ঝোপের ওপর আলোর হেলাফেলা এই এলো আশ্বিন, আমার শূন্য হলো দিন কেন শূন্য হলো দিন? মহাশ্বেতা মেঘের ধারে-ধারে আকাশ আপন ইন্দ্রনীলের ঝলক পাঠায় কাকে? ছাদে-ছাদে বাতাস ভাঙে রাঙা বৌ-এর খোঁপা এই এলো আশ্বিন, আমার শূন্য হলো দিন কেন শূন্য হলো দিন? শিউলি কবে ঝরেছিল কাদের আঙিনায় নওল-কিশোর ছেলেবেলার গন্ধ মনে আছে? তরুণ হাতের বিলি করা নিষিদ্ধ সব ইস্তেহারের মতো ব্যতিব্যস্ত মস্তো শহর জুড়ে এই এলো আশ্বিন, আমার শূন্য হলো দিন কেন শূন্য হলো দিন? p.167 [the following book was published well after this volume]
হে নবীনা, এই মধ্য-ম্যানহাটানে বাতাসের ঝাপটায় তোমার হঠাৎ খুলে যাওয়া উদ্দাম চুল আমার বুকের 'পরে আছরে পড়লো চিরকালের বাংলার বৈশাখের ঝঞ্জার মতন। তোমার জবার মতো চোখে রাঙা শ্রাবণের জল পালতোলা নৌকার মতোন বাঁকাচোরা ঢেউয়ে ঢেউয়ে কম্পমান তোমার বিপদগ্রস্ত স্তন। আমি ভাবতে পারি নি কোনোদিন এতো অসাধারণ আগুন প্রলয় এবং ধ্বংস রয়েছে তোমার চুম্বঙ্গুলিতে। হে নবীনা, আমার তামাটে তিক্ত ওষ্টের ও অবয়বের জন্যে যেসব চুম্বন জমে উঠবে সংগোপনে, তাদের উপর থেকে আমার স্বত্বাধিকার আমি ফিরিয়ে নিলাম আমাকে শীতের হাওয়ার হাতে ছেড়ে দাও, স্বনির্বাচিত এই নির্বাসনে নেকরের দঙ্গলের মতো আমাকে ছিঁড়ে খাক বরফে জ্বলতে থাকা ঋতু শুধু তুমি, আমার সংরক্ত চুম্বনের অন্তর্লীন আগুনগুলোকে পৌঁছে দাও শ্রাবণে আষাঢ়ে রোরুদ্যমান বিব্রত বাংলায়, বজ্রে, বজ্রে, বেজে উঠুক নতজানু স্বদেশ আমার। (কাব্যগ্রন্থঃ আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও) Links * choturmatrik.com : eleven poems * facebook page on shahid kadri, lists three poems. * safedblog four poems * http://arts.bdnews24.com/?p=1425: interview (in bAnglA) * rashal.com : seventeen poems