gangopAdhyAy, sunIl;
sunIl gangopAdhyAyer shreShTha kabitA (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা) [Srestha kabita]
De's Publishing, Kolkata, 1978 / 1997 (10th edn)
ISBN 8170791715, 9788170791713
topics: | poetry | bengali |
Am revisiting this volume after sunil's death two years back.
Like many other stalwarts of bengali literature, sunIl gangopadhyAy (1934-2012), was born in what is now bAnglAdesh - the village of mAijpARA in mAdAripur district (then a subdivision of faridpur). his father was a school teacher and they emigrated to calcutta when he was four. he found a position at a small school. Those were difficult years since "a teacher's salary was less than that of a peon in a bank". Moreover, school buildings were commandeered during the years of the second world war, and his father lost his income. the family was sent back to their ancestral home, where he continued his studies in a village school.
Eventually he finished school and joined Calcutta University, and started publishing poems in magazines. In 1953, he founded the magazine krittibAs, which became a forum for much avant garde experimentation in bengali literature.
His first volume of poetry, একা এবং কয়েকজন (ekA ebang kayekjan, "alone and with others") was published in 1957, and his first novel, AtmaprakAsh, in 1964.
In addition to his poetic oeuvre, he has also published a wide range of novels written under his own and in several pseudonyms. He has also written two widely acclaimed works of historical fiction set in british era calcutta, based on archival research: sei samay and pratham Alo, (translations published as "Those days" and "First Light"). His children's mysteries - with the protagonist kAkAbAbu - were a staple for many years in the pUja magazines. He has also written travelogues about bangladesh and also a biography, Moner mAnush about the mystic bAul singer-poet, Lalon Fakir. There have been many editions of this bestselling volume of poetry. This is the tenth edition, from 2002, and it differs from earlier versions, e.g. in including the long poems একটি ঐতিহাসিক চিত্র (ekTi aitihAsik chitra, "a historical portrait", p.185) and যা চেয়েছি, যা পাব না (JA cheyechhi, JA pAbo nA, "wishes I won't be getting" p.116)
p.30 apamAn ebang nIrAke uttar
from Ami ki rakam bhAbe bneche Achhi [1963]
আমি কি রকম ভাবে বেঁচে আছি
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে, নীরা, কেন হেসে উঠলে, কেন
সহসা ঘুমের মধ্যে যেন বজ্রপাত, যেন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, নীরা, হেসে উঠলে, সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে কেন সাক্ষী কেন বন্ধু কেন তিনজন কেন?
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন হেসে উঠলে সাক্ষী রইলো বন্ধু তিনজন!
একবার হাত ছুঁয়েছি সাত কি এগারো মাস পরে ঐ হাত
কিছু কৃশ, ঠাণ্ডা বা গরম নয়, অতীতের চেয়ে অলৌকিক
হাসির শব্দের মতো রক্তস্রোত, অত্যন্ত আপন ঐ হাত
সিগারেট না-থাকলে আমি দু’হাতে জড়িয়ে ঘ্রাণ নিতুম
মুখ বা চুলের নয়, ঐ হাত ছুঁয়ে আমি সব বুঝি, আমি
দুনিয়ার সব ডাক্তারের চেয়ে বড়, আমি হাত ছুঁয়ে দূরে
ভ্রমর পেয়েছি শব্দে, প্রতিধ্বনি ফুলের শূন্যতা–
ফুলের? না ফসলের? বারান্দার নিচে ট্রেন সিটি মারে,
যেন ইয়ার্কির
টিকিট হয়েছে কেনা, আবার বিদেশে যাবো সমুদ্রে বা নদী . . .
আবার বিদেশে,
ট্রেনের জানালায় বসে ঐ হাত রুমাল ওড়াবে।
রাস্তায় এলুম আর শীত নেই, নিশ্বাস শরীরহীন, দ্রুত
ট্যাক্সি ছুটে যায় স্বর্গে, হো-হো অট্টহাস ভাসে ম্যাজিক-নিশীথে
মাথায় একছিটে নেই বাষ্প, চোখে চমৎকার আধো-জাগা ঘুম,
ঘুম! মনে পড়ে ঘুম, তুমি, ঘুম তুমি, ঘুম, সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কেন ঘুম
ঘুমোবার আগে তুমি স্নান করো? নীরা তুমি, স্বপ্নে যেন এরকম ছিল . . .
কিংবা গান? বাথরুমে আয়না খুব সাঙ্ঘাতিক স্মৃতির মতন,
মনে পড়ে বস স্টপে? স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্নে–স্বপ্নে, বাস-স্টপে
কোনোদিন দেখা হয়নি, ও সব কবিতা! আজ যে রকম ঘোর
দুঃখ পাওয়া গেল, অথচ কোথায় দুঃখ, দুঃখের প্রভূত দুঃখ, আহা
মানুষকে ভূতের মতো দুঃখে ধরে, চৌরাস্তায় কোনো দুঃখ নেই, নীরা
বুকের সিন্দুক খুলে আমাকে কিছুটা দুঃখ বুকের সিন্দুক খুলে, যদি হাত ছুঁয়ে
পাওয়া যেত, হাত ছুঁয়ে, ধূসর খাতায় তবে আরেকটি কবিতা
কিংবা দুঃখ-না-থাকার-দুঃখ . . . । ভালোবাসা তার চেয়ে বড় নয়!
p.56 এবার কবিতা লিখে আমি একটা রাজপ্রাসাদ বানাবো এবার কবিতা লিখে আমি চাই পনটিয়াক গাড়ি এবার কবিতা লিখে আমি ঠিক রাষ্ট্রপতি না হলেও ত্রিপাদ ভূমির জন্য রাখবো পা উঁচিয়ে- মেশপালকের গানে এ পৃথিবী বহুদিন ঋণী! কবিতা লিখেছি আমি চাই স্কচ, শাদা ঘোড়া, নির্ভেজাল ঘৃতে পক্ক মুরগী দু-ঠ্যাং শুধু, বাকি মাংস নয়- কবিতা লিখেছি তাই আমার সহস্র ক্রীতদাসী চাই- অথবা একটি নারী অগোপন, যাকে আমি প্রকাশ্যে রাস্তায় জানু ধরে দয়া চাইতে পারি। লেভেল ক্রসিংয়ে আমি দাঁড়ালেই শুনতে চাই তোপধ্বনি এবার কবিতা লিখে আমি আর দাবি ছাড়বো না নেগি কুত্তা হয়ে আমি পায়ের ধুলোর থেকে গড়াগড়ি দিয়ে আসি হাড় থেকে রক্ত নিংড়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছি, ভিক্ষা চেয়ে মানুষের চোখ থেকে মনুষ্যত্ব খুলে- কপালের জ্বর, থুতু, শ্লেষ্মা থেকে কবিতার জন্য উঠে এসে মাতাল চন্ডাল হয়ে নিজেকে পুড়িয়ে ফের ছাই থেকে উঠে এসে আমার একলা ঘরে অসহায়তা মতো হা-হা স্বর থেকে উঠে এসে কবিতা লেখার সব প্রতিশোধ নিতে দাঁড়িয়েছি।।
keu kathA rAkheni p.64 (1966) this poem, from the collection বন্দী, জেগে আছো (bandI, Jege Achho, 1966] has achieved iconic status among bengali poetry lovers. it has an interesting story. SG had promised a poem for a magazine by a certain date. The day rolled by but he had nothing ready. a few days later, the publisher dropped by on him at his nAger bAjAr home. As he was seating the man in the drawing room, the line came to him - "no one keeps their word". SG told him - "I will just get it", and he wrote it up even as the man was waiting... কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে! নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে? একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা কত রকম আমোদে হেসেছে আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি! বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও . . . বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা! বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে! ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ এখনো সে যে-কোনো নারী। কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না!
p.70 [আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি 1966] নীরার চোখের জল অনেক চোখের অনেক নীচে টল্মল্ নীরার মুখের হাসি মুখের আড়াল থেকে বুক, বাহু, আঙুলে ছড়ায় শাড়ির আঁচলে হাসি, ভিজে চুলে, হেলানো সন্ধ্যায় নীরা আমাকে বাড়িয়ে দেয়, হাস্যময় হাত আমার হাতের মধ্যে চৌরাস্তায় খেলা করে নীরার কৌতুক তার ছদ্মবেশ থেকে ভেসে আসে সামুদ্রিক ঘ্রাণ সে আমার দিকে চায়, নীরার গোধূলি মাখা ঠোঁট থেকে ঝরে পড়ে লীলা লোধ্র আমি তাকে প্রচ্ছন্ন আদর করি, গুপ্ত চোখে বলি : নীরা, তুমি শান্ত হও অমন মোহিনী হাস্যে আমার বিভ্রম হয় না, আমি সব জানি পৃথিবী তোলপাড় করা প্লাবনের শব্দ শুনে টের পাই তোমার মুখের পাশে উষ্ণ হাওয়া নীরা, তুমি শান্ত হও! নীরার সহাস্য বুকে আঁচলের পাখিগুলি খেলা করে কোমর ও শ্রোণী থেকে স্রোত উঠে ঘুরে যায় এক পলক সংসারের সারাৎসার ঝলমলিয়ে সে তার দাঁতের আলো সায়াহ্নের দিকে তুলে ধরে নাগকেশরের মতো ওষ্ঠাধরে আঙুল ঠেকিয়ে বলে, চুপ! আমি জানি নীরার চোখের জল চোখের অনেক নিচে টল্মল্।। link: see other poems from আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি at banglakobita.com
p.75, from বন্দী, জেগে আছো [1966] হাওড়া ব্রীজের রেলিং ধরে একটু ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল দ্বারভাঙা জেলা থেকে আসা টাট্কা রমণী ব্রীজের অনেক নিচে জল, সেখানে কোনো ছায়া পড়ে না কিন্তু বিশাল এক ভগবতী কুয়াশা কলকাতার উপদ্রুত অঞ্চল থেকে গড়িয়ে এসে সভ্যতার ভূমধ্য অরিন্দে এসে দাঁড়ালো সমস্ত আকাশ থেকে খসে পড়লো ইতিহাসের পাপমোচানবারী বিষণ্ণতা ক্রমে সব দৃশ্য, পথ ও মানুষ মুছে যায়, কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু রইলো সেই লাল ফুল-ছাপ শাড়ি জড়ানো মূর্তি রেখা ও আয়তনের শুভবিবাহমূলক একটি উদাসীন ছবি- আকস্মাৎ ঘুরে গাঁড়ালো সে, সেই প্রধানা মচকা মাগি, গোঠের মল ঝামড়ে মোষ তাড়ানোর ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠলো, ইঃ রে-রে-রে-রে- মুঠো পিছলোনো স্তনের সূর্যমুখী লঙ্কার মতো বোঁটায় ধাক্কা মারলো কুয়াশা পাছার বিপুল দেলানিতে কেঁপে উঠলো নাদব্রহ্ম অ্যাক্রোপলিসের থামের মতো উরুতের মাঝখানে ভাটফুলে গন্ধ মাখা যোনির কাছে থেমে রইলো কাতর হওয়া ডৌল হাত তুলে সে আবার চেঁচিয়ে উঠলো, ইঃ রে-রে-রে-রে- তখন সর্বনাশের কাছে সৃষ্টি হাঁটু গেড়ে বসে আছে তখন বিষণ্নতার কাছে অবিশ্বাস তার আত্মার মুক্তিমূল্য পেয়ে গেছে... সব ধ্বংসের পর শুধু দ্বারভাঙা জেলার সেই রমণীই সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো কেননা ঐ মুহূর্তে সে মোষ তাড়ানোর স্বপ্নে দেখছিল ।।
p. 84 শাদা বাড়িটার সামনে আলো-ছায়া-আলো, একটি কঙ্কাল দাঁড়িয়ে এখন দুপুর রাত অলীক রাত্রির মতো, অরুণা রয়েছে খুব ঘুমে- যে-রকম ঘুম শুধু কুমারীর, যে ঘুম স্পষ্টত খুব নীল; যে স্তনে লগৈনি দাঁত তার খুব মৃদু ওঠপড়া তলপেটে একটুও নেই ফাটা.দাগ, এ শরীর আজও ঋণী নয় এই সেই অরুণা ও রুনি নাম্মী পরা ও অপরা সুখ ও আসুখ নিয়ে ওষ্ঠাধর, এখন রয়েছে খুব ঘমে যে-রকম ঘুম শুধু কুমারীর, যে-ঘুম স্পষ্টত খুব নীল। সন্ন্যাসীর সাহসের মতো আন্ত অন্ধকার, কে তুমি কঙ্কাল- প্রহরীর মতো, কেন বাধা তিদে চাও? কী তোমার ভাষা? ছাড়ো পথ, আমি ঐ সাদা বাড়িটার মধ্যে যাবো। করমচা ফুলেরঘ্রণ আলপিনের মতো এসে গয়ে লাগে থামের আড়োলে থেকে ছুটে এলো হাওয়া, বহু ঘুমের নিশ্বাস ভরা হাওয়া আমি অরুণার ঘুমে এক ঘুম ঘুমোতে চাই আজ মধ্য রাতে অরুণার শাড়ি ও শায়ার ঘুম, বুকে ঘুম, কুমারী জন্মের পবিত্র নরম ঘুম, আমি ব্রাহ্মণের মতো তার প্রার্থী। নিরস্ত্র কঙ্কাল, তুমি কার দূত? তোমার হৃদয় নেই, তুমি প্রতীক্ষার ভঙ্গি নিয়ে কেন প্রতিরোধ করে আছো? অরুণা ঘুমন্ত, এই সাদা বাড়িটার দ্বারে তুমি কেন জেগে? তুমি ভ্রমে বদ্ধ, তুমি ওপাশের লাল রঙা প্রাসাদের কাছে যাও ঐখানে পাশা খেলা হয়, হু-রে- রে চিৎকরে ওঠে হৃদয়ে শকুনির ঝটাপটি, তুমি যাও ছাড়ো পথ, আমি এই নিদ্রিত বাড়ির মধ্যে যাবো।।
p.86 (from বন্দী, জেগে আছো bandI, Jege Achho, 1966] যমুনা, আমার হাত ধরো, স্বর্গে যাবো। এসো, মুখে রাখো মুখ, চোখে চোখ, শরীরে শরীর নবীনা পাতার মতো শুদ্ধরূপ, এসো স্বর্গ খুব দুরে নয়, উত্তর সমুদ্র থেকে যে রকম বসন্ত প্রবাসে উড়ে আসে কলস্বর, বাহু থেকে শীতের উত্তাপ যে রকম অপর বুকের কাছে ঋণী হয়; যমুনা, আমার হাত ধরো, স্বর্গে যাবো। আমার প্রবাস আজ শেষ হলো, এরকম মধুর বিচ্ছেদ মানুষ জানেনি আর। যমুনা আমার সঙ্গী-সহস্র রুমাল স্বর্গের উদ্দেশ্যে ওড়ে; যমুনা তোমায় আমি নক্ষত্রের অতি প্রতিবেশী করে রাখি, আসলে কি স্বাতী নক্ষত্রের সেই প্রবাদ মাখানো অশ্রূ তুমি নও? তুমি নও ফেলে আসা লেবুর পাতার ঘ্রাণে জ্যোৎস্নাময় রাত? তুমি নও ক্ষীণ ধূপ? তুমি কেউ নও তুমিই বিস্মৃতি, তুমি শব্দময়ী, বর্ণ-নারী, স্তন ও জঙ্ঘায় নারী তুমি, ভ্রমণে শয়নে তুমি সকল গ্রনে’র যুক্ত প্রণয় পিপাসা চোখের বিশ্বাসে নারী, স্বেদে চুলে, নোখের ধুলোয় প্রত্যেক অণুতে নারী, নারীর ভিতরে নারী, শূণ্যতায় সহাস্য সুন্দরী, তুমিই গায়ত্রী ভাঙা মণীষার উপহাস, তুমি যৌবনের প্রত্যেক কবির নীরা, দুনিয়ার সব দাপাদাপি ক্রুদ্ধ লোভ ভুল ও ঘুমের মধ্যে তোমার মাধুরী ছুঁয়ে নদীর তরঙ্গ পাপীকে চুম্বন করো তুমি, তাই দ্বার খোলে স্বর্গের প্রহরী। তুমি এ রকম? তুমি কেউ নও তুমি শুধু আমার যমুনা। হাত ধরো, স্বরবৃত্ত পদক্ষেপে নাচ হোক, লজ্জিত জীবন অন্তরীক্ষে বর্ণনাকে দৃশ্য করে, এসো হাত ধরো। পৃথিবীতে বড় বেশী দুঃখ আমি পেয়ে গেছি, অবিশ্বাসে আমি খুনী, আমি পাতাল শহরে জালিয়াৎ, আমি অরণ্যেব পলাতক, মাংসের দোকানে ঋণী, উৎসব ভাঙার ছদ্মবেশী গুপ্তচর। তবুও দ্বিধায় আমি ভুলি নি স্বর্গের পথ, যে রকম প্রাক্তন স্বদেশ। তুমি তো জানো না কিছু, না প্রেম, না নিচু স্বর্গ, না জানাই ভালো তুমিই কিশোরী নদী, বিস্মৃতির স্রোত, বিকালের পুরস্কার…… আয় খুকী, স্বর্গের বাগানে আজ ছুটোছুটি করি।।
p.89 (from আমার স্বপ্ন AmAr svapna, 1970) যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষপান করে মরে যাবো । বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূম যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষপান করে মরে যাবো । ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম এখনো নদীর বুকে মোচার খোলায় ঘুরে লুঠেরা, ফেরারী । শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর, বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা বুলেট ও বিস্ফোরণ শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ রাত্রির শিশিরে তবু কাঁপে ঘাস ফুল-- এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষপান করে মরে যাবো । কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে নিথর দীঘির পারে বসে আছে বক আমি কি ভুলেছি সব স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক ? আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে শিমুল তুলার ওড়াওড়ি ? মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ শুনিনি কি দুপুরে চিলের তীক্ষ্ণ স্বর ? বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ... এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষপান করে মরে যাবো... । (online at jolshaghor)
p.106 from আমার স্বপ্ন AmAr svapna [1970] দু’জন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহী কবিকে নিয়ে গেল টানতে টানতে কবি প্রশ্ন করলেন : আমার হাতে শিকল বেঁধেছ কেন? সিপাহী দু’জন উত্তর দিল না; সিপাহী দু’জনেরই জিভ কাটা। অস্পষ্ট গোধুলি আলোয় তাদের পায়ে ভারী বুটের শব্দ তাদের মুখে কঠোর বিষণ্নতা তাদের চোখে বিজ্ঞাপনের আলোর লাল আভা। মেটে রঙের রাস্তা চলে গেছে পুকুরের পাড় দিয়ে ফ্লোরেসেন্ট বাঁশঝাড় ঘুরে- ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি। সেখানে আরও চারজন সিপাহী রাইফেল হাতে প্রস্তুত তাদের ঘিরে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ কেউ এসেছে বহু দূরের অড়হর ক্ষেত থেকে পায়ে হেঁটে কেউ এসেছে পাটকলে ছুটির বাঁশি আগে বাজিয়ে কেউ এসেছে ঘড়ির দোকানে ঝাঁপ ফেলে কেউ এসেছে ক্যামেরায় নতুন ফিল্ম ভরে কেউ এসেছে অন্ধের লাঠি ছুঁয়ে ছুঁয়ে জননী শিশুকে বাড়িতে রেখে আসেননি যুবক এনেছে তার যুবতীকে বৃদ্ধ ধরে আছে বৃদ্ধতরর কাঁধ সবাই এসেছে একজন কবির হত্যাদৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে। খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হলো কবিকে, তিনি দেখতে লাগলেন তাঁর ডান হাতের আঙুলগুলো- কনিষ্ঠায় একটি তিল, অনামিকা অলঙ্কারহীন মধ্যমায় ঈষৎ টনটনে ব্যথা, তর্জনী সঙ্কেতময় বৃদ্ধাঙ্গুলি বীভৎস, বিকৃত- কবি সামান্য হাসলেন, একজন সিপাহীকে বললেন, আঙুলে রক্ত জমে যাচ্ছে হে, হাতের শিকল খুলে দাও! সহস্র জনতার চিৎকারে সিপাহীর কান সেই মুহূর্তে বধির হয়ে গেল। জনতার মধ্য থেকে একজন বৈজ্ঞানিক বললেন একজন কসাইকে, পৃথিবীতে মানুষ যত বাড়ছে, ততই মুর্গী কমে যাচ্ছে। একজন আদার ব্যাপারী জাহাজ মার্কা বিড়ি ধরিয়ে বললেন, কাঁচা লঙ্কাতেও আজকাল তেমন ঝাল নেই! একজন সংশয়বাদী উচ্চারণ করলেন আপন মনে, বাপের জন্মেও এক সঙ্গে এত বেজম্মা দেখিনি, শালা! পরাজিত এম এল এ বললেন একজন ব্যায়ামবীরকে, কুঁচকিতে বড় আমবাত হচ্ছে হে আজকাল! একজন ভিখিরি খুচরো পয়সা ভাঙিযে দেয় বাদামওয়ালাকে একজন পকেটমারের হাত অকস্মাৎ অবশ হয়ে যায় একজন ঘাটোয়াল বন্যার চিন্তায় আকুল হয়ে পড়ে একজন প্রধানা শিক্ষয়িত্রী তাঁর ছাত্রীদের জানালেন প্লেটো বলেছিলেন... একজন ছাত্র একটি লম্বা লোককে বললো, মাথাটা পকেটে পুরুন দাদা! এক নারী অপর নারীকে বললো, এখানে একটা গ্যালারি বানিয়ে দিলে পারতো... একজন চাষী একজন জনমজুরকে পরামর্শ দেয়, বৌটার মুখে ফোলিডল ঢেলে দিতে পারো না? একজন মানুষ আর একজন মানুষকে বলে, রক্তপাত ছাড়া পৃথিবী উর্বর হবে না। তবু একজন যেন সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, এ তো ভুল লোককে এনেছে। ভুল মানুষ, ভুল মানুষ। রক্ত গোধূলির পশ্চিমে জ্যোৎস্না, দক্ষিণে মেঘ বাঁশবনে ডেকে উঠলো বিপন্ন শেয়াল নারীর অভিমানের মতন পাতলা ছায়া ভাসে পুকুরের জলে ঝমঝুমির মতন একটা বকুল গাছের কয়েকশো পাখির ডাক কবি তাঁর হাতের আঙুল থেকে চোখ তুলে তাকালেন, জনতার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখা ও অক্ষর থেকে রক্তমাংসের সমাহার তাঁকে নিয়ে গেল অরণ্যের দিকে ছেলেবেলার বাতাবি লেবু গাছের সঙ্গে মিশে গেল হেমন্ত দিনের শেষ আলো তিনি দেখলেন সেতুর নিচে ঘনায়মান অন্ধকারে একগুচ্ছ জোনাকি দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হলো চুল, তিনি বুঝতে পারলেন সমুদ্র থেকে আসছে বৃষ্টিময় মেঘ তিনি বৃষ্টির জন্য চোখ তুলে আবার দেখতে পেলেন অরণ্য অরণের প্রতিটি বৃক্ষির স্বাধীনতা- গাব গাছ বেয়ে মন্থরভাবে নেমে এলো একটি তক্ষক ঠিক ঘড়ির মতন সে সত বার ডাকলো : গঙ্গে সঙ্গে ছয় রিপুর মতন ছ’জন বোবা কালা সিপাহী উঁচিয়ে ধরলো রাইফেল- যেন মাঝখানে রয়েছে একজন ছেলেধরা এমন ভাবে জনতা ক্রুদ্ধস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো ইনকিলাব জিন্দাবাদ! কবির স্বতঃপ্রবৃত্ত ঠোঁট নড়ে উঠলো তিনি অস্ফুট হৃষ্টতায় বললেন : বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! মানুষের মুক্তি আসুক! আমার শিকল খুলে দাও! কবি অত মানুষের মুখের দিকে চেয়ে খুঁজলেন একটি মানুষ নারীদের মুখের দিকে চেয়ে খুঁজলেন একটি নারী তিনি দু’জনকেই পেয়ে গেলেন কবি আবার তাদের উদ্দেশ্যে মনে মনে বললেন, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক! মিলিত মানুষ ও প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব বিপ্লব! প্রথম গুলিটি তাঁর কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল- যেমন যায়, কবি নিঃশব্দে হাসলেন দ্বিতীয় গুলিতেই তাঁর বুক ফুটো হয়ে গেল কবি তবু অপরাজিতের মতন হাসলেন হা-হা শব্দে তৃতীয় গুলি ভেদ করে গেল তাঁর কন্ঠ কবি শান্ত ভাবে বললেন, আমি মরবো না! মিথ্যে কথা, কবিরা সব সময় সত্যদ্রষ্টা হয় না। চতুর্থ গুলিতে বিদীর্ণ হয়ে গেল তাঁর কপাল পঞ্চম গুলিতে মড় মড় করে উঠলো কাঠের খুঁটি ষষ্ঠ গুলিতে কবির বুকের ওপর রাখা ডান হাত ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে গেল কবি হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগলেন মাটিতে জনতা ছুটে এলো কবির রক্ত গায়ে মাথায় মাখতে- কবি কোনো উল্লাস-ধ্বনি বা হাহাকার কিছুই শুনতে পেলেন না কবির রক্ত ঘিলু মজ্জা মাটিতে ছিট্কে পড়া মাত্রই আকাশ থেকে বৃষ্টি নামলো দারুণ তোড়ে শেষে নিশ্বাস পড়ার আগে কবির ঠোঁট একবার নড়ে উঠলো কি উঠলো না কেউ সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করেনি। আসলে, কবির শেষ মুহূর্তটি মোটামুটি আনন্দেই কাটলো মাটিতে পড়ে থাকা ছিন্ন হাতের দিকে তাকিয়ে তিনি বলতে চাইলেন, বলেছিলুম কিনা, আমার হাত শিকলে বাঁধা থাকবে না!
p.142 (from দাঁড়াও সুন্দর dnARAo sundar, 1973] ঘুমন্ত নারীকে জাগাবার আগে আমি তাকে দেখি উদাসীন গ্রীবার ভঙ্গি, শ্লোকের মতন ভুরু ঠোঁটে স্বপ্ন বিংবা অসমাপ্ত কথা এ যেন এক নারীর মধ্যে বহু নারী, বিংবা দর্পণের ঘরে বস চিবুকের ওপরে এসে পড়েছে চুলের কালো ফিতে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না, কেননা আবহমান কাল থেকে বেণীবন্ধনের বহু উপমা কয়েছে আঁচল ঈষৎ সরে গেছে বুক থেকে-এর নাম বিস্রস্ত, এরকম হয় নীল জামা, সাদা ব্রা, স্তনের গোলাপী আভাস, এক বিন্দু ঘাম পেটের মসৃণ ত্বক, ক্ষীণ চাঁদ নাভি, সায়ার দড়ির গিট উরুতে শাড়ীর ভাঁজ, রেখার বিচিত্র কোলাহল পদতল-আল্পনার লক্ষ্মীর ছাপের মতো এই নারী নারী ও ঘুমন্ত নারী এক নয় এই নির্বাক চিত্রটি হতে পারে শিল্প, যদি আমি ব্যবধান টিক রেখে দৃষ্টিকে সন্ন্যাসী করি হাতে তুলে খুঁজে আনি মন্ত্রের অক্ষর তখন নারীকে দেখা নয়, নিজেকে দেখাই বড় হয়ে ওঠে বলে নিছক ভদ্রতাবশে নিভিয়ে দিই আলো তারপর শুরু হয় শিল্পকে ভাঙার এক বিপুল উৎসব আমি তার ওষ্ঠ ও উরুতে মুখ গুঁজে জানাই সেই খবর কালস্রোত সাঁতরে যা কোথাও যায় না।
p.144; from দাঁড়াও সুন্দর dnARAo sundar [1973] কত দূর বেড়াতে গেলুম, আর একটু দূরেই ছিল স্বর্গ দু'মিনিটের জন্য দেখা হলো না হঠাত্ ট্রেন হুইশ্ল দেয় খুচরো পয়সার জন্য ছোটাছুটি রিটার্ন টিকিটে একটি সই আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি! এত কাছে, হাতছানি দেয় স্বর্গের মিনার, ঘ্রাণ আসে পারিজাতের ছুটে গিয়ে একবার দেখে আসবো না? শরীর উদ্যত হয়েছিল, সেই মুহূর্তে চলন্ত ট্রেন আমায় লুফে নেয় পাপের সঙ্গীরা হা-হা-হা-হা করে হাসে দেখা হলো না, আমার সর্বাঙ্গে এই শব্দ অস্তিত্বকে অভিমানী করে আমি স্বর্গ থেকে দূরে সরে যাই!
how close it was, how close - from where we'd gone - just a little ahead lay heaven; missed it by just two minutes suddenly the train's whistle, tickets to be purchased run around for small change stationmaster's signature on the return ticket half helplessly i looked there, just beyond those trees the towers of heaven from the platform you could smell the pArijAt flowers maybe there was time to just run along once but then the moving train plucked me from flight "ho ho ho ho" they laughed my partners in sin, deep in the interstices of my soul their laughter echoes even as i move further and further off from my heaven [transl. amit mukerjee apr 09]
p.181 (দেখা হলো ভলোবাসা বেদনায়, 1979) জুলপি দুটো দেখতে দেখতে শাদা হয়ে গেল! আমাকে তরুণ কবি বলে কেউ ভুলেও ভববে না পরবর্তী অগণন তরুণেরা এসেছে সুন্দর ক্রুদ্ধ মুখে তাদের পৃথিবী তারা নিজস্ব নিয়মে নিয় নিক! আমি আর কফি হাউস থেকে হেঁটে হেঁটে হেঁটে নিরুদ্দিষ্ট কখনো হবে না আমি আর ধোঁয়া দিয়ে করবো না ক্ষিদের আচমন্! আমি আর পকেটে কবিতা নিয়ে ভেরবেলা বন্ধবান্ধবের বাড় যাবো না কখনো হসন্তকে এক মাত্রা ধরা হবে কিনা এর তর্কে আর ফাটাবো না চায়ের টেবিল আর কি কখনো আমি সুনীলকে মিল দেব কণ্ডেন্সড্ মিল্কে? এখন ক্রমশ আমি চলে যাবো তুমি’-র জগৎ ছেড়ে আপনি’-র জগতে কিছু প্রতিরোধ করে, হার মেনে, লিখে দেব দুটি প্রতিরোধ করে, হার মেনে, লিখে দেব দুটি একটি বইয়ের ভূমিকা আকস্মাৎ উৎসব-বাড়িতে পূর্ব প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হলে তার হৃষ্টপুষ্ট স্বামীটির সঙ্গে হবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা দিন যাবে, এরকমভাবে দিন যাবে! অথচ একলা দিনে, কেউ নেই, শুয়ে আমি আমি আর বুকের ওপরে প্রিয় বই ঠিক যেন কৈশোরে পেরিয়ে আসা রক্তমাখা মরূদ্যান খেলা করে মাথার ভিতরে জঙ্গলের সিংহ এক ভাঙা প্রাসাদের কোণে ল্যাজ আছড়িয়ে তোলে গম্ভীর গর্জন নদীর প্রাঙ্গণে ওই স্নিগ্ধ ছায়ামূর্তিখানি কার? ধড়ফড় করে উঠে বসি কবিতার খাতা খুলে চুপে চাপে লিখে রাখি গতকালপরশুর কিছু পাগলামি!
p.184 (স্বর্গ নগরীর চাবি 1978) একটাই তো কবিতা লিখতে হবে, লিখে যাচ্ছি সারা জীবন ধরে আকাশে একটা রক্তের দাগ, সে আমার কবিতা নয় আমার রাগী মুহূর্ত কবিতা থেকে বহুদূরে সরে যায় একটাই তো কবিতা লিখতে হবে অথচ শব্দ তাকে দেখায় না সহস্রার পদ্ম যজ্ঞ চলেছে সাড়স্বরে, কিন্তু যাজ্ঞসেনী অজ্ঞাতবাসে একটাই কো কবিতা কখন টলমলে শিশিরের শালুক বনে ঝড় উঠবে তার ঠিক নেই দরজার পাশে মাঝে মাঝে কে যেন এসে দাঁড়ায় মুখ দেখায় না ভালোবাসার পাশে শুয়ে থাকে হিংস্র একটা নেকড়ে নদীর ভেতর থেকে উঠে আসে গরম নিশ্বাস একটাই তো কবিতা লিখতে হবে আগোছাল কাগজপত্রের মধ্য থেকে উকি মারে ব্যর্থতা অপমান জমতে জমতে পাহাড় হয়, তার ওপর উড়িয়ে দেবার কথা স্বর্গের পতাকা শজারুর মতন কাঁটা ফুলিয়ে চলঅ-ফেরা করতে হয় মানুলের মধ্যে রাত্রে সিগারেট ধরিয়ে মনে হয়, এ-এক ভুলমানুষের জীবন বূল মানুষেরা কবিতা লেখে না, তারা অনেক দূরে, অনেক দূরে যেন বজ্রকীট উল্টো হয়ে পড়ে আছে, এত অসহায় নতুন ইতিহাসের মধ্যে ছড়িয়ে থাকে সম্রাটদের কাঙালপনা একটাই তো কবিতা, লিখে যাচ্ছি লিখে যাবো, সারা জীবন ধরে আবার দেখা হবে, আবার দেখা হবে, আবার দেখা হবে!
p.221 [বাতাসে কিসের ডাক শোনো, 1987]
চাঁদের নীলাভ রং, ওইখানে লেগে আছে নীরার বিষাদ
ও এমন কিছু নয়, ফুঁ দিলেই চাঁদ উড়ে যাবে
যে রকম সমুদ্রের মৌসুমিতা, যে রকম
প্রবাসের চিঠি
অরণ্যের এক প্রান্তে হাত রেখে নীরা কাকে বিদায় জানালো
আঁচলে বৃষ্টির শব্দ, ভুরুর বিভঙ্গে লতা পাতা
ও যে বহুদূর,
পীত অন্ধকারে ডোবে হরিৎ প্রান্তর
ওখানে কী করে যাবো, কী করে নীরাকে
খুঁজে পাবো?
অক্ষরবৃত্তের মধ্যে তুমি থাকো, তোমাকে মানায়
মন্দাক্রান্তা, মুক্ত ছন্দ, এমনকি চাও শ্বাসাঘাত
দিতে পারি, অনেক সহজ
কলমের যে-টুকু পরিধি তুমি তাও তুচ্ছ করে
যদি যাও, নীরা, তুমি কালের মন্দিরে
ঘন্টধ্বনি হয়ে খেলা করো, তুমি সহাস্য নদীর
জলের সবুজে মিশে থাকো, সে যে দূরত্বের চেয়ে বহুদূর
তোমার নাভির কাছে জাদুদণ্ড, এ কেমন খেলা
জাদুকরী, জাদুকরী, এখন আমাকে নিয়ে কোন রঙ্গ
নিয়ে এলি চোখ-বাঁধা গোলকের ধাঁধায়!
p.226 মনে পড়ে সেই সুপুরি গাছের সারি ... এপারে ওপারে ঢিল ছুঁড়ে ডাকাডাকি্ ওদিকের গ্রামে রোদ্দুর কিছু বেশি ছায়া ঠোঁটে নিয়ে উড়ে যায় ক'টি পাখি ভরা নৌকায় গান গায় ভিন দেশি । সাঁকোটির কথা মনে আছে, আনোয়ার? এত কিছু গেল, সাঁকোটি এখনো আছে এপার ওপার স্মৃতিময় একাকার সাঁকোটা দুলছে, এই আমি তোর কাছে! মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে... ২২২ প্ল্যাটফর্মে নেমে পায়চারি করতে করতে দু'হাত ছড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙতেই...
prem_hIn [also, প্রেমবিহীন prem_bihIn] from একা এবং কয়েকজন ekA ebang kayekjan 1957 শেষ ভালোবাসা দিয়েছি তোমার পূর্বের মহিলাকে এখন হৃদয় শূন্য, যেমন রাত্রির রাজপথ ঝকমক করে কঠিন সড়ক, আলোয় সাজানো, প্রত্যেক বাঁকে বাঁকে প্রতীক্ষা আছে আঁধারে লুকানো তবু জানি চিরদিন এ-পথ্ থাকবে এমনি সাজানো, কেউ আসবে না, জনহীন, প্রেমহীন শেষ ভালোবাসা দিয়েছি তোমার পূর্বের মহিলাকে! রূপ দেখে ভুলি কী রূপের বান, তোমার রূপের তুলনা কে দেবে? এমন মূঢ় নেই কেউ, চক্ষু ফেরায়, চক্ষু ফেরাও চোখে চোখে যদি বিদ্যুৎ জ্বলে কে বাঁচাবে তবে? এ হেন সাহস নেই যে বলবো; যাও ফিরে যাও প্রেমহীন আমি যাও ফিরে যাও বটের ভীষণ শিকড়ের মতো শরীরের রস নিতে লোভ হয়, শরীরে অমন সুষমা খুলো না চক্ষু ফেরাও, চক্ষু ফেরাও! টেবিলের পাশে হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়ালে তোমার বুক দেখা যায়, বুকের মধ্যে বাসনার মতো রৌদ্যের আভা, বুক জুড়ে শুধু ফুলসম্ভার,- কপালের নিচে আমার দু’চোখে রক্তের ক্ষত রক্ত ছেটানো ফুল নিয়ে তুমি কোন্ দেবতার পূজায় বসবে? চক্ষু ফেরাও, চক্ষু ফেরাও, শত্রু তোমার সামনে দাঁড়িয়ে, ভীরু জল্লাদ, চক্ষু ফেরাও! তোমার ও রূপ মূর্ছিত করে আমার বাসনা, তবু প্রেমহীন মায়ায় তোমায় কাননের মতো সাজাবার সাধ, তবু প্রেমহীন চোখে ও শরীরে এঁকে দিতে চাই নদী মেঘ বন, তবু প্রেমহীন এক জীবনের ভালোবাসা আমি হারিয়ে ফেলেছি খুব অবেলায় এখন হৃদয় শূন্য, যেমন রাত্রির রাজপথ।।
p.236 (from সেই মুহুর্তে নীরা sei muhUrte nIrA, 1997) মা, তুমি কেমন আছ? আমার পোষা বেড়াল খুনচু সে কেমন আছে? সে রাত্তিরে কার পাশে শোয়? দুপুরে যেন আলি সাহেবদের বাগানে না যায়। মা, ঝিঙে মাচায় ফুল এসেছে? তুলি কে আমার ডুরে শাড়িটা পর়তে বোলো। আঁচলের ফেঁসোটা যেন সেলাই করে নেয়। তুলি কে কত মেরেছি! আর কোনদিন মারবো না । আমি ভালো আছি। আমার জন্য চিন্তা কোরো না মা, তোমাদের ঘরের চালে নতুন খড় দিয়েছো? এবারে বৃষ্টি হয়েছে খুব তরফদার বাবুদের পুকুরটা কি ভেসে গেছে? কালু-ভুলুরা মাছ পেয়েছে কিছু? একবার মেঘের ডাক শুনে কৈ মাছ উঠে এসেছিল ডাঙায় আমি আম গাছ তলায় দুটো কৈ মাছ ধরেছিলাম তোমার মনে আছে, মা? মনে আছে আলি সাহেবের বাগানের সেই নারকোল? চুরি করে আনিনি! মাটিতে পড়েছিল, কেউ দেখেনি নারকোল বড়ার সে স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে । আলি সাহেবের ভাই মিজান আমাকে খুব আদর করতো বাবা একদিন দেখতে পেয়ে চেলা কাঠ দিয়ে পিটিয়েছিল আমাকে। আমার কি দোষ, কেউ আদর করলে আমি না বলতে পারি? আমার পিঠে এখনো সে দাগ আছে। আলি সাহেবদের বাগানে আর কোনদিন যাইনি। আমি আর কোনো বাগানেই যাই না সেই দাগটায় হাত বুলিয়ে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবার জন্য আমার খুব কষ্ট হয় আমি ভালো আছি, খুব ভালো আছি বাবা যেনো আমার জন্য একটুও না ভাবে। তুলি কি এখনো ভুতের ভয় পায়, মা? তুলি আর আমি পুকুর ধারে কলাবউ দেখেছিলাম সেই থেকে তুলির ফিটের ব্যারাম শুরু হলো দাদা সেই কলা গাছটা কেটে ফেললো আমি কিন্তু ভয় পাই নি, তুলি কে কত খেপিয়েছি...... আমার আবার মাঝরাত্রে সেই কলা বউ দেখতে ইচ্ছে করে। হ্যাঁ, ভালো কথা, দাদা কোনো কাজ পেয়েছে? নকুলবাবু যে বলেছিল, বহরমপুরে নিয়ে যাবে দাদাকে বোলো আমি ওর উপরে রাগ করিনি রাগ পুষে রাখলে মানুষের বড় কষ্ট আমার শরীরে আর রাগ নেই, আমি আর এক ফোঁটাও কাঁদি না মা, আমি রোজ দোকানের খাবার খাই হোটেল থেকে দু' বেলা আমার খাবার এনে দেয় মাংস মুখে দেই আর তুলির কথা, কালু-ভুলুর কথা মনে পড়ে তোমাদের গ্রামে পটল পাওয়া যায় না আমি আলু পটলের তরকারী খাই, পটল ভাজাও খাই হোটেলে কিন্তু কখনো শাক রান্না হয় না| পুকুর পাড় থেকে তুলি আর আমি তুলে আনতাম কলমি শাক কি ভালো, কি ভালো, বিনা পয়সায় কোনোদিন আর কলমি শাক আমার ভাগ্যে জুটবে না| জোর হাওয়া দিলে তাল গাছের পাতা শরশর করে ঠিক বৃষ্টির মত শব্দ হয়। এই ভাদ্দর মাসে তাল পাকে ডিব ডিব করে তাল পড়ে। বাড়ির তাল গাছ দুটো আছে তো? কালু তালের বড়া বড় ভালবাসে, একদিন বানিয়ে দিও তেলের খুব দাম জানি! তবু একদিন দিও আমাকে বিক্রি করে দিয়ে ছ-হাজার টাকা পেয়েছিলে তা দিয়ে একটা গরু কেনা হয়েছে তো? সেই গরুটা ভালো দুধ দেয়? আমার মতন মেয়ের চেয়ে গরুও অনেক ভালো গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারের সুসার হয় গরুর বাছুর হয়, তাতেও কত আনন্দ হয়! বাড়িতে কন্যা সন্তান থাকলে কত জ্বালা! দু'বেলা ভাত দাও রে, শাড়ি দাও রে, বিয়ের জোগাড় করো রে| হাবলু, মিজান, শ্রীধর দের থাবা থেকে মেয়েকে বাঁচাও রে। আমি কি বুঝি না? সব বুঝি| কেন আমায় বিক্রি করে দিলে তাও তো বুঝি সে জন্যই তো আমার কোনো রাগ নেই, অভিমান নেই। আমি তো ভালোই আছি, খেয়ে পরে আছি। তোমরা ওই টাকায় বাড়ি ঘর সারিয়ে নিও ঠিকঠাক। কালু-ভুলু কে ইস্কুলে পাঠিও| তুলিকে ব্রজেন ডাক্তারের ওষুধ খাইও। তুমি একটা শাড়ি কিনো, বাবার জন্য একটা ধুতি দাদার একটা ঘড়ির সখ, তা কি ও টাকায় কুলোবে? আমি কিছু টাকা জমিয়েছি, সোনার দুল গড়িয়েছি। একদিন কি হলো জানো মা? আকাশে খুব মেঘ জমে ছিল, দিনের বেলায় ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। মনটা হঠাত কেমন কেমন করে উঠলো| দুপুরবেলা চুপি চুপি বের়িয়ে ট্রেনে চেপে বসলাম স্টেশনে নেমে দেখি একটা মাত্র সাইকেল রিক্শা! খুব ইচ্ছে হলো একবার বাড়িটা দেখে আসি। রথতলার মোড়ে আসতেই কারা যেন চেঁচিয়ে উঠলো- কে যায়? কে যায়? দেখি যে হাবুল-শ্রীধরদের সঙ্গে তাস খেলছে দাদা আমাকে বললো, হারামজাদী, কেন ফিরে এসেছিস? আমি ভয় পেয়ে বললাম, ফিরে আসিনি গো, থাকতেও আসিনি একবার শুধু দেখতে এসেছি হাবুল বলল, এটা একটা বেবুশ্যে মাগী কী করে জানলো বলো তো তা কি আমার গায়ে লেখা আছে? আর একটা ছেলে, চিনি না, বললো, ছি ছি ছি, গাঁয়ের বদনাম! হাবুল রিকশাওয়ালা কে চোখ রাঙিয়ে বললো, ফিরে যা আমি বললাম, দাদা, আমি মায়ের জন্য ক’টা টাকা এনেছি আর তুলির জন্য... দাদা টেনে একটা চড় কষালো আমার গালে। আমাকে বিক্রির টাকা হকের টাকা আর আমার রোজগারের টাকা নোংরা টাকা দাদা সেই পাপের টাকা ছোঁবে না, ছিনিয়ে নিল শ্রীধর আমাকে ওরা দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। আমি তবু দাদার ওপর রাগ করিনি দাদা তো ঠিকই করেছে, আমি তো আর দাদার বোন নই, তোমার মেয়ে নই, তুলির দিদি নই আমার টাকা নিলে তোমাদের সংসারের অকল্যাণ হবে না, না আমি চাই তোমরা সবাই ভালো থাকো গরুটা ভালো থাকুক, তালগাছ দুটো ভালো থাকুক পুকুরে মাছ হোক, ক্ষেতে ধান হোক, ঝিঙে মাচায় ফুল ফুটুক আর কোনোদিন ঐ গ্রাম অপবিত্র করতে যাবো না আমি খাট-বিছানায় শুই, নীল রঙের মশারি, দোরগোড়ায় পাপোশ আছে, দেওয়ালে মা দুর্গার ছবি আলমারি ভর্তি কাচের গেলাস। বনবন করে পাখা ঘোরে। সাবান মেখে রোজ চান করি এখানকার কুকুরগুলো সারা রাত ঘেউ ঘেউ করে তাহলেই বুঝছো, কেমন আরামে আছি আমি? আমি আর তোমার মেয়ে নই, তবু তুমি আমার মা তোমার আরও ছেলেমেয়ে আছে আমি আর মা পাবো কোথায়? সেইজন্যই তোমাকে চিঠি লিখছি, মা তোমার কাছে একটা খুব অনুরোধ আছে তুলিকে একটু যত্ন করো, ও বেচারি বড় দুর্বল। যতই অভাব হোক, তবু তুলিকে তোমরা... তোমার পায়ে পড়ি মা, তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বলো, তুলিকেও যেন আমার মতন আরামের জীবনে না পাঠায় যেমন করে হোক, তুলির একটা বিয়ে দিও| ওর একটা নিজস্ব ঘর সংসার, একজন নিজের মানুষ। আর যদি কোনোরকমই ওর বিয়ে দিতে না পারো? ওকে বলো গলায় দড়ি দিয়ে মরতে মরলে ও বেঁচে যাবে ! না,না,না এ কী অলক্ষুণে কথা বলছি আমি? তুলি বেঁচে থাকুক, আর সবাই বেঁচে থাকুক তুলির বিয়ে যদি না হয় না হোক হে ভগবান, গরিবের বাড়ির মেয়ে কি বিয়ে না হলে বাঁচতে পারে না? বিয়ে না হলেই তাকে গ্রামের সবাই ঠোকরাবে? দু’পায়ে জোর হলে তুলি কোথাও চলে যাক মাঠ পেরিয়ে, জলা পেরিয়ে, জঙ্গল পেরিয়ে আরও দূরে, আবরও দূরে, যেদিকে দু’চোখ যায় এমন জায়গা নিশ্চয়ই কোথাও আছ, কোথাও না কোথাও আছে যেখানে মানুষরা সবাই মানুষের মতন আঁচড়ে দেয় না, কামড়ে দেয় না. গায়ে ছ্যাঁকা দেয় না, লাথি মারে না যেখানে একটা মেয়ে, শুধু মেয়ে নয়, মানুষের মত বাঁচতে পারে মা, তুমি আমার মা, আমি হারিয়ে গেছি তুলিকে তুমি... তুলি যেন... আমার মতন না হয় । [a woman, sold to a brothel for six thousand rupees, writing to her mother]
ekA ebang kayekjan 1957 17 প্রার্থনা বিবৃতি 18 দুপুর 19 চতুরের ভূমিকা 20 তুমি 20 সহজ 21
Ami ki rakam bhAbe bneche Achhi [1963] স্বপ্ন, একুশে ভাদ্র 22 মহারাজ, আমি তোমার mahArAj, Ami tomAr 23 অসুখের ছড়া 24 হঠাৎ নীরার জন্য haThA.t nIrAr janya 25 শুধু কবিতার জন্য শুধু কবিতার জন্য shudhu kabitAr janya 26 চোখ বাঁধা 27 আমার খানিকটা দেরি হয়ে যায় 28 জুয়া 29 অপমান এবং নীরাকে উত্তর apamAn ebang nIrAke uttar 30 সাবধান 32 হিমযুগ 33 নির্বাসন 34 জ্বালান্ত জিরাফ 35 পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর কিছুই থাকে না 36 প্রেমহীন 38 রাখাল 39 একটি কবিতা লেখা 39 নীরা তোমার কাছে 43 আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি 44 আমি ও কলকাতা 45 অনর্থক নয় 47 নীরার জন্য কবিতার ভূমিকা 49 চোখ বিষয়ে 50 মৃত্যুদন্ড 51 নীরা ও জীরো আওয়ার 52 প্রবন্ধ ও রম্যরচনা, অনুবাদ, পাঁচ বছর আগের শুরু করা উপন্যাস, সংবাদপত্রের জল মেশানো গদ্য থেকে আজ এই সাড়ে দশটায় আমি সব ভেঙ্গেচুরে উঠে দাঁড়াতে চাই ... তোমার বাড়ির সামনে থুতু ছিটিয়ে বালি : এই প্রাসাদ একদিন আমি ভেঙে ফেলবো | শব্দ ২ 54 সকল ছন্দের মধ্যে আমিই গায়াত্রী 54 এই হাত ছুঁয়েছিল 55 এবার কবিতা লিখে 56 দেখা হবে 57
bandI, Jege Achho [1966] গহন অরণ্যে 58 চিনতে পারোনি? 59 ছায়ার জন্য 60 দুটি অভিশাপ 61 নীরার অসুখ 62 আথেন্স থেকে কায়রো 63 ছেলেটা 63 কেউ কথা রাখেনি keu kathA rAkheni 64 অরূপরাজ্য 66 ভালোবাসা 67 জয়ী নই, পরাজিত নই 67 বাড়ি ফেরা 68 নীরার হাসি ও অশ্রু 70 ইচ্ছে 71 কাচের চুড়ি ভাঙ্গার মতোই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিনদুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি } জলের সামনে 72 জীবন ও জীবনের মর্ম 73 শব্দ 74 নিসর্গ 75 দ্বারভাঙা জেলার রমণী 75 উত্তরাধিকার uttarAdhikAr 76 নীরার পাশে তিনটি ছায়া 77 বন্দী, জেগে আছো? 78 আত্মা 78 ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি 78 প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জনলায় বসে, গুজরাটের বন্যা দেখতে যেও না এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা ক্রুদ্ধ জলের প্রবল তোলপাড়ের উপড়ে গেছে রেললাইন চৌচির হয়েছে ব্রীজ, মৃত পশুর পেটের কাছে ছন্নছাড়া বালক তরঙ্গে ভেসে যায় বৃদ্ধের চশমা, বৃক্ষের শিখরে মানুষের আপৎকালীন বন্ধুত্ব শরীর অশরীরী 79 ধান 81 কৃতঘ্ন শব্দের রাশি kṛtaghna shabder rAshi 82 সিঁড়ির ধাপের মতো বিস্মরণ বহুদূর নেমে যায় ভুলে যাই নীরার নাভির গন্ধ চোখের কৌতুকময় বিষণ্ণতা নীরার চিবুকে কোনো তিল ছিল? (কৃতঘ্ন শব্দের রাশি) আরও নিচে 83 তুমি 84 কঙ্কাল ও সাদা বাড়ি 84 নিরাভরণ 85 প্রবাসের শেষে 86
AmAr svapna (1969) বাতাসে তুলোর বীজ 87 এক-একদিন উদাসীন 88 যদি নির্বাসন দাও if you exile me 89 শব্দ 91 আমার কৈশোরে 93 রুপালি মানবী 94 জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না 95 কিশোর ও সন্ন্যাসিনী 95 মুক্তি 97 চন্দনকাঠের বোতাম 97 গদ্যছন্দে মনোবেদনা 99 হাসন্ রাজার বাড়ি 100 তিনজন মানুষ 101 পেয়েছো কি? 102 রক্তমাখা সিঁড়ি 103 ধাত্রী 104 নীরার দুঃখকে ছোঁয়া 105 কবির মৃত্যু : লোরকা স্মরণে kabir mrityu : lorkA smaraNe 106 বিদেশ 111 উনিশশো একাত্তর 112
satyabaddha abhimAn 1971 সত্যবদ্ধ অভিমান 113 চে গুয়েভেরার প্রতি 114 পাওয়া 116
যা চেয়েছি, যা পাব না 116 অপেক্ষা 121 অন্য লোক 121 সেই সব স্বপ্ন 122 কবির দুঃখ 124 পাহাড় চুড়ায় 125 চেনার মুহূর্ত 126 সখী, আমার 127 মনে মনে 128 তুমি যেখানেই যাও 129 জাগরণ হেমবর্ণ 130 বয়েস 131
dnARAo sundar [1973] ভালোবাসার পাশেই 132 শিল্পী ফিরে চলেছেন একটি শীতের দৃশ্য 134 একটি কথা 135 নিজের আড়ালে 135 নারী 136 আছেও নেই 138 কথা ছিল 139 আমি নয় 140 মায়া 142 নারী ও শিল্প 142 প্রেমিকা 143 স্বর্গের কাছে 144
man bhAlo nei [1976] মন ভালো নেই 145 বনমর্মর 145 দেহতত্ব 146 ঝর্নার পাশে 147 কবিতা মূর্তিমতী 148 শিশুরক্ত 149 তোমার কাছেই 150 এখনো সময় আছে 150 ছবি খেলা 152 চাস্নালা 153 ভাই ও বন্ধু 154 প্রবাস 155 সুন্দরের পাশে 156 প্রতীক্ষায় 157 সেদিন বিকেলবেলা 157 সে কোথায় যাবে 158 তমসার তীরে নগ্ন শরীরে 159 যে তোমায় 160 স্বপ্নের কবিতা 161 জল বাড়ছে 162
এই দৃশ্য 163 শিল্প প্রদর্শনীতে 164 লাইব্রেরীর মধ্যে 165 রূপনারানের কূলে 166 নীরার কাছে 167 শব্দ আমার 168 ধলভূমগড়ে আবার 168 একটি স্তব্ধতা চেয়েছিল 169 এই জীবন 170 তুমি আমি 170
কবিতা লেখার চেয়ে 171 এই জীবন 172 দ্বিখান্দিত 173 ইচ্ছে হয় 174 নেই 174 সেই লেখাটা 175 গুহাবাসী 175 কৃত্তিবাস 177 পুনর্জন্মের সময় 177 সারাটা জীবন 178 শিল্প 179 ব্যর্থ প্রেম 180 কিছু পাগলামি 181
সুন্দর মেখেছে এত ছাই-ভস্ম 183 পাথরের নিচে জল ঘুমে মগ্ন কয়েকশো বছর মোষের পিঠের মতো, রাত্রির মেঘের মতো কালো ... এইমাত্র ছুটে এল যে-বাতাস তাতে যেন চিরুনির দাঁত একটাই তো কবিতা 184 একটি ঐতিহাসিক চিত্র 185 অ থেকে চন্দ্রবিন্দু পর্যন্ত 197 মানাস ভ্রমণ 198 প্রতীক জীবন 199 স্পর্শটুকু নাও 199 ঝড় 200 কানাকানির মতন পথের শিশুরা এদিক ওদিক দৌড়ে যায় মাটি কাঁপে, মাটি কাঁপে ...
sonAr mukuT theke [1979] সোনার মুকুট থেকে 201 অন্তত একবার এ-জীবনে 202 অ 203 মিথ্যে নয় 204 অপরাহ্নে 205 নীরা তুমি 206 জনমদুখিনী 207 ভোরবেলার মুখচ্ছবি 207 একটা দুটো ইচ্ছে 208
স্মৃতির শহর ১ 208 স্মৃতির শহর ৩ 212 স্মৃতির শহর ৮ 213 স্মৃতির শহর ১২ 214 স্মৃতির শহর ১৫ 214 স্মৃতির শহর ২৭ 215
bAtAse kiser DAk shono, "voices in the wind" 1987 বীর্য 217 তাই সামান্য 218 বাতাসে কিসের ডাক, শোনো 219 নীরা তুমি কালের মন্দিরে 221 মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে ... 222
rAtrir rendezvous, "rendezvous at night" (1995) বর্ষণমালা 223 সাঁকোটা দুলছে 226 সময়ের চিহ্নগুলি সময় মনে না 228 স্টিফেন হকিং-এর প্রতি 229
"at that moment, nIrA", jan 1997 আমার সব আপনজন 230 স্বপ্ন দর্শন 232 সেই মুহুর্তে নীরা 233 চূর্ণ-কবিতা 234 সপ্তম গর্ভের কন্যা 235 না-পাঠানো চিঠি 236
সঙ্গীতভ্রমণ 241 শক্তি 242 তোমার সঙ্গে দেখা হলে 244 বাবা 244 বই 246 দুটি নাম 247 একটি গ্রাম্য দৃশ্য 248 http://www.somewhereinblog.net/blog/subirbose/28954769 “ভোরবেলায় বৃষ্টি একজন সাক্ষী চেয়েছিল, তাই আমি হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে বাইরে আসি” (কত দূরে)। কাকলি বাইরে এসেই বুঝতে পারল, ভুল করেছে। এ বৃষ্টি ঠিক মীর্জাপুরের নিরীহ বৃষ্টি নয়। সাগর ঘেঁষা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দু’তিনটে ঝাপটা হজম করার পর, এক দৌড়ে বিছানায়। “কোথায় নামলো ঝড় - এখানে আকাশে মেঘ ছোঁয়া পাখি এক ভয় পেয়ে ঘরে ফিরে আসে” (ঝড়)। [diff] ... “ইন্দিরা, লক্ষ্মী মেয়ে, তোমার একথা ভোলা উচিৎ নয় মেঘের প্রাসাদে বসে তোমার করূণ কন্ঠস্বরেও কোনো সর্বজনীন দুঃখ ধ্বনিত হবে না তোমার শুকনো ঠোঁট, কতদিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি”। [was this in an earlier version? later revised? ] দুঃসাহসিক! ওই “শুকনো ঠোঁট” আর “চুম্বনের” ব্যাপারটা কেউ ইন্দিরা গান্ধীর কানে তুলেছিলেন। ইন্দিরা মন্তব্য করেছিলেন, “নটি”। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এমনটাই লিখে থাকেন। সরাসরি। “বহু অর্চনা করেছি তোমায়, এখন ইচ্ছে টেনে চোখ মারি” (চেনার মুহূর্ত) সেবার কাকলি ক’দিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল। প্রচুর লোকজন আসত বিকেলবেলার দিকে। ভালো লাগত। তবে মাঝে মাঝে দর্শনার্থীদের আলাপ-আলোচনা শুনে মনে হত, ওঁরা কেন এসেছেন, সেটাই সম্ভবত ভুলে গেছেন। “একবার হাসপাতালে যাও সুস্থ একটা আপেলের মতো শায়িতা মূর্তিরা সব তোমাকে ঠোকরাবে চোখে চোখে ছিমছাম নার্সেরা ঘুরবে, অবিন্যস্ত নম্রতায় নত দৈনিক চাকরির মতো আত্মীয়েরা মুহ্যমান ধরাবাঁধা শোকে”। (একবার হাসপাতালে যাও) ওপরের লাইনগুলোতে “আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো” একটু যেন পুরোনো ভাষা। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, ওটা অমোঘ। অমনভাবে লেখা বলেই লাইনটা পুরোনো দিনের দুরন্ত তৈলচিত্রের মতো হাজির পাঠকের চোখের সামনে। কাকলি, প্রচুর কবিতা পড়ার ফাঁকে, মাঝে মাঝে কবিতা লেখার চেষ্টা করে। কী ভাবে আসে কবিতা? সেদিন হঠাৎ চোখে পড়ে গেল, একটা কবিতা আর তার সৃষ্টিসুখের উল্লাস। “প্রতিধ্বনি, তুমি তো স্বর্গের দিকে গিয়েছিলে কেন ফিরে এলে এই আমূল নশ্বর, শূন্যমাঘ, শরীরের কাছে” এই কবিতা সৃষ্টির পেছনের ঘামের দাগগুলো কবি সামনে এনে দিয়েছেন। তিন নম্বর লাইনটা সম্বন্ধে কবি লিখেছেন, “যে কোনো কবিতার তৃতীয় লাইনই বোধ হয় সবচেয়ে শক্ত। এভরি থার্ড থট ইজ মাই কিলার,..”। আর লিখেছেন, “‘আমূল’ শব্দটা আমি পাই একটা মাখনের (খালি) টিনের প্রতি চোখ পড়তে। কিন্তু সে সময় আমি পেচ্ছাপ করতে যাই। সুতরাং ও শব্দটা বসাতে ইচ্ছে হলো পুরুষের দন্ড অর্থে। শুধু শরীরই নশ্বর নয়, ও জিনিসটা আরও আগেই নশ্বর যে।‘শূন্যমাঘ’ শব্দটা কেন বসিয়েছি, ফ্র্যাঙ্কলি জানি না”। “এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ আমি কি এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি”? (সত্যবদ্ধ অভিমান) “নীরা, শুধু তোমার কাছেই এসে বুঝি সময় আজো থেমে আছে”। (বয়েস) “নীরা, মনে পড়ে, এই নদীর তরঙ্গে তোমার শরীরখানি একদিন অপ্সরার রূপ নিয়েছিল”? (যা ছিল) “সিঁড়ির ধাপের মতো বিস্মরণ বহুদূর নেমে যায় ভুলে যাই নীরার নাভির গন্ধ চোখের কৌতুকময় বিষণ্ণতা নীরার চিবুকে কোনো তিল ছিল”? (কৃতঘ্ন শব্দের রাশি) উফ! নীরা, নীরা আর নীরা! এরপরেও আছে অনুপম প্রেমের অনন্য উদাহরণ, অক্ষর রোমান্টিকতায়। “নীরার অসুখ হলে কলকাতায় সবাই বড় দুঃখে থাকে সূর্য নিবে গেলে পর, নিয়নের বাতিগুলো হঠাৎ জেনে নেয় নীরা আজ ভালো আছে”। (নীরার অসুখ) এখানে এসে ‘নিবে’ শব্দটায় চোখ আটকে যায় কাকলির। কথ্য ভাষা বোধহয় একেই বলে। ওই একটা শব্দ যেন ভাষার আন্তরিকতাকে দ্বিগুন করে দেয়। এরপর কাকলির চোখ আটকে যায় একটি কবিতার শেষ তিন লাইনে - “আসলে কবির শেষ মুহূর্তটি মোটামুটি আনন্দেই কাটলো মাটিতে পড়ে থাকা ছিন্ন হাতের দিকে তাকিয়ে তিনি বলতে চাইলেন, বলেছিলুম কিনা, আমার হাতে শিকল বাঁধা থাকবে না”। (কবির মৃত্যুঃ লোরকা স্মরণে) আন্তরিকতা থেকে এক লাফে সহমর্মিতায় পৌছে যাওয়া। পুরো কবিতাটা শেষ করতে হয় একটা ঘোরের মধ্যে। আচ্ছা, কবিও কি সেই ‘ঘোরের’ মধ্যেই লিখেছিলেন এই কবিতা? কাকলিদের এবার বাড়ি ফেরার সময় হলো। আজ রাতে ট্রেন, কাল সকাল থেকেই আবার দিনগত পাপক্ষয়। এ’কটা দিন দারুন কাটলো। মন খারাপের সন্ধ্যায়, কয়েকটা লাইন - “ওপাশে নীরেনবাবুর বাড়ি, থাক। এ সময় যাওয়া চলে না - ডাকাতের ছদ্মবেশ ছাড়া চায়ের ফরমাশ করলে নিশ্চয় চা খাওয়াতেন, তিনদিন পরে অন্য প্রসঙ্গে র্ভৎসনা”। (বাড়ি ফেরা) কাকলি মুচকি হেসে ওই কবিতার শেষ লাইনে ঢুকে গেল, “আয়নায় নিজের মুখ চিনে নিয়ে বারান্দা পেরিয়ে ঢুকবো ঘরে”।