book excerptise:   a book unexamined is wasting trees

shudhu Abrittir janya

bratatI bandyopadhyay

bandyopadhyay, bratatI [ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়];

shudhu Abrittir janya [শুধু আবৃত্তির জন্য]

deep prakAshan দীপ 2006, 368 pages

ISBN 000

topics: |  poetry | bengali | anthology


in addition to being a fine selection of bAnglA poetry, bratatI's
annotations are also sensitive and informative.  many of these poems
have been recorded by her.

though it opens with tagore and nazrul, five out of six poems are from
poets born in the twentieth century.  with 153 poems by 30 poets, this is
a treasure trove of modern bAnglA poetry, and an AbrittikAr's delight.

the most modern voice in the collection is shrIjAta শ্রীজাত, b. 1975.
earlier poets are born in the 50s.  it would have been nice to have
mandAkrAntA sen in this collection - many of her poems are quite
striking and Abritti-able.

Excerpts

উদ্বাস্তু (udvAstu) : অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত


চল, তাড়াতাড়ি কর,
আর দেরি নয়, বেরিয়ে পড় বেরিয়ে পড় এখুনি।
ভোররাতের স্বপ্নভরা আদুরে ঘুমটুকু নিয়ে
আর পাশে ফিরতে হবে না।
উঠে পড় গা ঝাড়া দিয়ে,
সময় নেই-
এমন সুযোগ আর আসবে না কোন দিন।
বাছবাছাই না ক’রে হাতের কাছে যা পাস
তাই দিয়ে পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে নে হুট ক’রে।
বেড়িয়ে পড়,
দেরী করলেই পস্তাতে হবে
বেরিয়ে পড়-
ভূষণ পাল গোটা পরিবারটাকে ঝড়ের মতো নাড়া দিলে।
কত দূর দিগন্তের পথ-
এখান থেকে নৌকা ক’রে ষ্টিমার ঘাট
সেখান থেকে রেলষ্টেশন-
কী মজা, আজ প্রথম ট্রেনে চাপাবি,
ট্রেন ক’রে চেকপোষ্ট,
সেখান থেকে পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-
ছোট ছোলেটা ঘুমমোছা চোখে জিঞ্জেস করলে,
সেখান থেকে কোথায় বাবা?
কোথায় আবার! আমাদের নিজের দেশে।
ছায়াঢাকা ডোবার ধারে হিজল গাছে
ঘুমভাঙা পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে উঠল।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাল সেই ছোট ছেলে,
দেখলে তার কাটা ঘুড়িটা এখনো গাছের মগডালে
লটকে আছে,
হাওয়ায় ঠোক্কর খাচ্ছে তবুও কিছুতেই ছিঁড়ে পড়ছে না।
ঘাটের শান চ’টে গিয়ে যেখানে শ্যাওলা জমেছে
সেও করুণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় যাবে?
হিজল গাছের ফুল টুপ টুপ ক’রে এখনো পড়ছে জলের উপর,
বলছে, যাবে কোথায়?
তারপর একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মত ধান হয়েছে-
লক্ষীবিলাস ধান-
সোনা রঙ ধরবে ব’লে। তারও এক প্রশ্ন- যাবে কোথায়?
আরো দূরে ছলছলাৎ পাগলী নদীর ঢেউ
তার উপর চলেছে ভেসে পালতোলা ডিঙি ময়ূরপঙ্খি
বলছে, আমাদের ফেলে কোথায় যাবে?
আমারা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু?
এ জন্মের কেউ নই? স্বজন নই?

তাড়াতাড়ি কর- তাড়াতাড়ি কর-
ঝিকিমিকি রোদ উঠে পড়ল যে।
আঙিনায় গোবরছড়া দিতে হবে না,
লেপতে হবে না পৈঁঠে-পিঁড়ে,
গরু দুইতে হবে না, খেতে দিতে হবে না,
মাঠে গিয়ে বেঁধে রাখতে হবে না।
দরজা খুলে দাও, যেখানে খুশি চলে যা’ক আমাদের মত।
আমাদের মত! কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
তা জানিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আছে কী?
সব আছে। অনেক আছে, অঢেল আছে-
কত আশা কত বাসা কত হাসি কত গান
কত জন কত জায়গা কত জেল্লা কত জমক।
সেখানকার নদী কি এমনি মধুমতী?
মাটি কি এমনি মমতামাখানো?
ধান কি এমনি বৈকুন্ঠবিলাস?
সোনার মত ধান আর রুপোর মতো চাল?
বাতাস কি এমনি হিজলফুলের গন্ধভরা
বুনো-বুনো মৃদু মৃদু?
মানুষ কি সেখানে কম নিষ্ঠুর কম ফন্দিবাজ কম সুবিধাখোর?
তাড়াতাড়ি করো, তাড়াতাড়ি করো-
ভূষণ এবার স্ত্রী সুবালার উপর ধমকে উঠল:
কী কত বাছাবাছি বাঁধাবাঁধি করছ,
সব ফেলে ছড়িয়ে টুকরো-টুকরো ক’রে এপাশে-ওপাশে বিলিয়ে দিয়ে
জোর কদমে এগিয়ে চলো,
শেষ পর্যন্ত চলুক থামুক ট্রেনে গিয়ে সোয়ার হও,
সোয়ার হতে পারলেই নিশ্চিন্তি।
চারধারে কী দেখছিস? ছেলেকে ঠেলা দিল ভূষণ-
জলা-জংলার দেশ, দেখবার আছে কী!
একটা কানা পুকুর
একটা ছেঁচা বাঁশের ভাঙা ঘর
একটা একফসলী মাঠ
একটা ঘাসী নৌকো-
আসল জিনিস দেখবি তো চল ওপারে,
আমাদের নিজের দেশে, নতুন দেশে,
নতুন দেশের নতুন জিনিষ-মানুষ নয়, জিনিস-
সে জিনিসের নাম কী?
নতুন জিনিসের নতুন নাম-উদ্বাস্তু।

ওরা কারা চলেছে আমাদের আগে-আগে-ওরা কারা?
ওরাও উদ্বাস্তু।
কত ওরা জেল খেটেছে তকলি কেটেছে
হত্যে দিয়েছে সত্যের দুয়ারে,
কত ওরা মারের পাহাড় ডিঙিয়ে গিয়েছে
পেরিয়ে গিয়েছে কত কষ্টক্লেশের সমুদ্র,
তারপর পথে-পথে কত ওরা মিছিল করেছে
সকলের সমান হয়ে, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে,
পায়ে-পায়ে রক্ত ঝরিয়ে-
কিন্তু ক্লান্ত যাত্রার শেষ পরিচ্ছেদে এসে
ছেঁড়াখোঁড়া খুবলে-নেওয়া মানচিত্রে
যেন হঠাৎ দেখতে পেল আলো-ঝলমল ইন্দ্রপুরীর ইশারা,
ছুটল দিশেহারা হয়ে
এত দিনের পরিশ্রমের বেতন নিতে
মসনদে গদীয়ান হয়ে বসতে
ঠেস দিতে বিস্ফারিত উপশমের তাকিয়ায়।
পথের কুশকন্টককে যারা একদিন গ্রাহ্যের মধ্যেও আনেনি
আজ দেখছে সে-পথে লাল শালু পাতা হয়েছে কিনা,
ড্রয়িংরুমে পা রাখবার জন্যে আছে কিনা
বিঘৎ-পুরু ভেলভেটের কার্পেট।
ত্যাগব্রতের যাবজ্জীবন উদাহরণ হয়ে থাকবে ব’লে
যারা এত দিন ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চড়েছে
সাধারণ মানুষের দুঃখদৈন্যের শরিক হয়ে
তারাই চলেছে এখন রকমারি তাকমার চোপদার সাজানো
দশঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে
পথচারীদের হটিয়ে দিয়ে, তফাৎ ক’রে দিয়ে
সমস্ত সামনেওয়ালাকে পিছনে ফেলে
পর-ঘর বিদেশী বানিয়ে।
হ্যাঁ, ওরাও উদ্বাস্তু।
কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে
কেউ উৎখাত আদর্শ থেকে।

আরো আগে, ইতিহাসেরও আগে, ওরা কারা?
ঐ ইন্দ্রপুরী-ইন্দ্রপ্রস্থ থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ের দিকে-
মহাভারতের মহাপ্রস্থানের পঞ্চনায়ক ও তাদের সঙ্গিনী
স্ব- স্বরূপ- অনুরূপা-
যুদ্ধ জয় ক’রেও যারা সিংহাসনে গিয়ে বসল না
কর্ম উদযাপন ক’রেও যারা লোলুপ হাতে
কর্মফল বন্টন করল না নিজেদের মধ্যে,
ফলত্যাগ করে কর্মের আদর্শকে রেখে গেল উঁচু ক’রে,
দেখিয়ে গেল প্রথমেই পতন হল দ্রৌপদীর-
পক্ষপাতিতার।
তারপর একে একে পড়ল আর সব অহঙ্কার
রূপের বিদ্যার বলের লোভের-আগ্রাসের-
আরো দেখাল। দেখাল-
শুধু যুধিষ্ঠিরই পৌছয়
যে হেতু সে ঘৃণ্য বলে পশু বলে
পথের সহচর কুকুরকেও ছাড়ে না।

পূর্ণেন্দু পত্রী (pUrNendu patrI)


পূর্ণেন্দু পত্রী : কথোপকথন


একদা কলকাতা নামের এই শহরে শুভঙ্কর নামে ৪৫ বছর বয়সী এক সদ্যজাত যুবক ভালোবেসে
ফেলেছিল নন্দিনী নামের এক বিদ্যুৎ-শিখাকে। গেরিলা-যুদ্ধের মতো তাদের গোপন
ভালোবাসাবাসির নিত্যসঙ্গী ছিলাম আমি। আর নিজের খাতায় রোজ় টুকে রাখতুম তাদের
আবীর-মাখানো কথোপকথনগুলো। সেই শুভঙ্করের বয়স এখন ৫০।
সেই নন্দিনী হয়ত এখন বন্দিনী নিদারুণ-সুখের কোনো সোনার পালঙ্কে।

ওদের মাঝখানে নদী আর খেয়া দুটোই গেছে হারিয়ে। একবার ভেবেছিলুম ঝড়ের অন্ধকারে উড়িয়ে
দিই টুকরো এইসব কাগজ। পরে মনে হল, যারা ভালোবাসে, ভালোবেসে জ্বলে, জ্বলে পৃথিবীর
দিগন্তকে রাঙিয়ে দেয় ভিন্ন এক গোধূলি-আলোয়, তাদের সকলেরই অনেক আপন-কথা, গোপন-কথা
রয়ে গেছে এর ভিতরে। এমনকি আমার মৃত্যুর পরেও যাদের রক্তে শুরু হবে তুমুল শ্রাবণের
চাষ-বাস, তাদের মুখগুলোও ভেসে উঠল চোখে। অগত্যা ছিন্ন-ভিন্ন ঐ সব কাগজগুলোকে হেলাফেলায়
মরতে দিতে পারলাম না আর।


কথোপকথন-১


তোমার পৌঁছতে এত দেরী হল?
পথে ভীড় ছিল?
আমারও পৌঁছতে একটু দেরী হল
সব পথই ফাটা।
পথে এত ভীড় ছিল কেন?
শবযাত্রা? কার মৃত্যু হল?
আমাদের চেনা কেউ না তো?
এই তো সেদিন যোগো গেল
দৌড়ে গেল, এখনও ফিরল না।
আগে পরে শঙ্কর, বিমল।
আমাদের যাকে যাকে প্রয়োজন তারাই পালায়
দূরের সমুদ্রে চলে যায়
কালো নুলিয়ারা যায় যে-রকম বিলীনের দিকে।
আরও যাবে, আমরাও যাবো।
লোকাল ট্রেনের মতো বেশ ঘন ঘন
আসছে যাচ্ছে মৃত্যু আজকাল।
তোমার কেমন মৃত্যু ভালো লাগে?
আমি? সেরিব্রাল?
মৃত্যুর কথায় রাগ হল?
মৃত্যুর প্রসঙ্গ তবে থাক
জীবনের আলোচনা হোক।

তোমার চিবুকে এত ছায়া কেন?
অন্ধকারে ছিলে?
আমার কপালে এত ঘাম কেন?
রোদ্দুরে ছিলাম।
তুমি আজ টিপ পরনি তো?
আমি আজ পাঞ্জাবি পরিনি।
তোমার খোঁপার চুল ভাঙা কেন?
ঝড়ে পড়েছিলে?
আমার চুলের ফাঁকে রক্ত কেন?
বাজ পড়েছিল।

আজকাল রোজই ঝড় ওঠে।
গাছ পড়ে, ল্যাম্পপোষ্ট পড়ে
মানুষও পাখির মত ছিঁড়ে-খুঁড়ে
খানাখন্দে পড়ে।
ঝড় যেন তুফান এক্সপ্রেস
হাঁউ-মাঁউ হাঁউ-মাঁউ
মানুষের গন্ধ পাঁউ...
ঝড়ের কথায় রাগ হল?
ঝড়ের প্রসঙ্গ তবে থাক।
জীবনের আলোচনা হোক।

তোমার চোখের মণি লাল কেন?
বৃষ্টিতে ভিজেছো?
আমার হাতের শিরা নীল কেন?
আগুনে পুড়েছে।
বলেছিলে আজ চিঠি দেবে,
এনেছো? বাঃ, মেনি মেনি থ্যাঙ্কস।
একি দিলে? এ তো শুধু খাম!
খাম থেকে চিঠি কোথা গেল?
ঝড়ে উড়ে গেছে?
আমারও চিঠির সব লেখা
জলে ধুয়ে গেছে।
আজকাল জলও শিখে গেছে
নানান ছলনা।
জল কারো শাড়িকে ভেজায়
জ়ল কারো ঘরবাড়ি কাড়ে
দরজায় ব্যস্ত কড়া নাড়ে।
একবার আমাদের ঘরছাড়া করেছিল জল
বালিশ, তোষক, খাট, ঘটি-বাটি থালা
সবকিছু হাঙরের হাঁ-এ গিলে খেলো।
পচা-জ়লে আমরা যেন শ্যাওলার,
কচুরিপানার
নিকট আত্মীয় হয়ে...
জলের কথায় রাগ হল?
জলের প্রসঙ্গ তবে থাক।
জীবনের আলোচনা হোক।

কাল তুমি স্বপ্ন দেখেছিলে?
মিশর? মিশরে গিয়েছিলে?
কি আশ্চর্য! আমিও তো কাল
স্বপ্নে ঐ মিশরে ছিলাম।
সারি সারি মমির কঙ্কাল।
হীরের চোখের মতো চোখ
মুক্তোর দাঁতের মতো দাঁত
প্রাণ ছাড়া বাকি সব প্রাণের আরাম
নক্ষত্রদিপ্তীতে ফুটে আছে।
এদের কি আর মৃত্যু হবে?
তুমি প্রশ্ন জানালে আমাকে।
এরা তো মৃত্যুরই স্কাল্পচার
আমি জানালাম।
তোমার দুচোখ নদী হলো
তোমার চিবুকে জ্যোৎস্না এলো।
তুমি যেন সুখে নীল অন্তরীক্ষ হলে।
তুমি বললে, আমি মমি হবো।
তুমি মৃত হতে হতে
তুমি ধ্বংস হতে হতে
তুমি মমি হতে হতে
মমির কথায় রাগ হলো?
মমির প্রসঙ্গ তবে থাক
জীবনের আলোচনা হোক।


কথোপকথন ৪


-যে কোন একটা ফুলের নাম বল
-দুঃখ।
-যে কোন একটা নদীর নাম বল
-বেদনা।
-যে কোন একটা গাছের নাম বল
-দীর্ঘশ্বাস।
-যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল
-অশ্রু।
-এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি
-বলো।
খুব সুখী হবে জীবনে।
শ্বেতপাথরে পা।
সোনার পালঙ্কে গা।
এগোতে সাতমহল
পিছোতে সাতমহল।
ঝর্ণার জলে স্নান
ফোয়ারার জলে কুলকুচি।
তুমি বলবে, সাজবো।
বাগানে মালিনীরা গাঁথবে মালা
ঘরে দাসীরা বাটবে চন্দন।
তুমি বলবে, ঘুমবো।
অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা,
অমনি জ্যোৎস্নার ভিতরে এল লক্ষ নর্তকী।
সুখের নাগরদোলায় এইভাবে অনেকদিন।
তারপর
বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে
রক্তের রাঙা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে
একটা সাপ
গায়ে বালুচরীর নক্‌সা
নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ
বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি,
দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ,
পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে
যেন বটের শিকড়
মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন।
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রঙ হলুদ
ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত সোনার গয়নায় শ্যাওলা
ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা।
-সেই সাপটা বুঝি তুমি?
-না।
-তবে?
-স্মৃতি।
বাসরঘরে ঢোকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে
পোড়া ধূপের পাশে।


কথোপকথন ৭


তোমার চিঠি আজ বিকেলের চারটে নাগাদ
পেলাম।
দেরি হলেও জবাব দিলে, সপ্তকোটি
সেলাম।
আমার জন্যে কান্নাকাটি? ম ন কে পাথ র
বানাও।
চারুলতা আসছে আবার। দেখবে কিনা
জানাও।
কখন কোথায় দেখা হচ্ছে লেখোনি এক
ফোঁটাও।
পিঠে পরীর ডানা দিলে, এবার হাওয়ায়
ছোটাও।
আসবে কি সেই রেস্টুরেন্টে, সিতাংশু যার
মালিক?
রুপোলী ধান খুঁটবে বলে ছটফটাচ্ছে
শালিক।


কথোপকথন ৮


- উত্তরোত্তর অত্যন্ত বাজে হয়ে উঠছো তুমি।
আজ থেকে তোমাকে ডাকবো
চুল্লী।
কেন জান? কেবল পোড়াচ্ছ বলে।
সুখের জন্যে হাত পাতলে যা দাও
সে তো আগুনই।

- উত্তরোত্তর অত্যন্ত যা-তা হয়ে উঠছো তুমি
আজ থেকে আমিও তোমাকে ডাকবো
জল্লাদ।
কেন জান? কেবল হত্যা করছো বলে।
তোমাকে যা দিতে পারি না, তার দুঃখ
সে তো ছুরিরই ফলা।


কথোপকথন ৯


আজ তোমাকে অনেক নামে ডাকতে ইচ্ছে করছে।
ডাকবো?
আজকে তুমি প্রথম শ্রাবণ, সঙ্গে চাঁপার গন্ধ
মাখবো?

গভীরতর গানের ভিতর খেয়া দেওয়ার নৌকো
চলছে।
একটু আগে হাসলে যেন আকাশ সোনার আংটি
গলছে।

এখন তোমায় ‘কুরুস কাঠি’ এই নামেতে ডাকবো
শুনছো?
ছিলাম সুতো, তাকে হাজার চৌকো ও গোল নকশায়
বুনছো।


কথোপকথন ১০


- কাল বাড়ি ফিরে কী করলে?
- কাঁদলাম। তুমি?
- লিখলাম।
- কবিতা? কই দেখাও।
- লিখেই কুচিকুচি।
- কেন?
- আমার আনন্দের ভিতরে অনর্গল কথা বলছিল আর্তনাদ
আর্তনাদের ভিতরে গুনগুন গলা ভাঁজছিল অদ্ভুত এক শান্তি
আর শান্তির ভিতরে সমুদ্রের সাঁইসাঁই ঝড়।
যে সব অক্ষর লিখলেই লাল হওয়ার কথা
তারা হয়ে যাচ্ছিল সাদা।
যে সব শব্দ সাদা কাশবন হয়ে দুলবে
তাদের মনে হচ্ছিল শুকনো পাতার ওড়াউড়ি।
বুঝলাম সে ভাষা আমার জানা নেই
যার আয়নায় নিজের মুখ দেখবে ভালোবাসা।
- তাই বলে ছিঁড়ে ফেললে?
- বাতাস থেকে একটা অট্টহাসি লাফিয়ে উঠে বললে
পিদিমের সলতে হয়ে আরো কিছুদিন পুড়ে খাক হ।
পুড়ে খাক হ।


কথোপকথন ১৩


- তোমার মধ্যে অনন্তকাল বসবাসের ইচ্ছে
তোমার মধ্যেই জমিজমা ঘরবাড়ি, আপাতত একতলা
হাসছো কেন? বলো হাসছো কেন?
- একতলা আমার একবিন্দু পছন্দ নয়।
সকাল-সন্ধে চাঁদের সঙ্গে গপ্পোগুজব হবে
তেমন উঁচু না হলে আবার বাড়ি নাকি?
- আচ্ছা তাই হবে।
চাঁদের গা-ছুঁয়ে বাড়ি,
রহস্য উপন্যাসের মতো ঘোরানো-প্যাঁচানো সিঁড়ি
বাঁকে বাঁকে সোনালী ফ্রেমে বাঁধানো স্বপ্নদৃশ্য
শিং-সমেত মায়া হরিণের মুন্ডু
হাসছো কেন? বলো হাসছো কেন?
- কাটা-হরিণ দেয়ালে ঝুলবে, অসহ্য।
হরিণ থাকবে বনে, বন থাকবে আমাদের
খাট পালঙ্কের চারধারে
খাট পালঙ্কের নীচে ছোট্ট একটা পাহাড়
পাহাড়ের পেট চিরে ঝর্ণা
- আচ্ছা তাই হবে।
পাহাড়ের পেট চিরে ঝর্ণা, ঝর্ণার পেট চিরে কাশ্মিরী কার্পেট
সিলিং-এ রাজস্থানী-ঝাড় জলের ঝাঁঝরির মত উপুর করা
জানলার গায়ে মেঘ, মেঘের গায়ে ফুরফুরে আদ্দির
পাঞ্জাবি
পাঞ্জাবির গায়ে লক্ষ্ণৌ-ই চিকনের কাজ
হাসছো কেন? বলো হাসছো কেন?
- মেঘ রোজ রোজ পাঞ্জাবি পরবে কেন?
এক একদিন পরবে বালুচরি শাড়ি কিংবা
খাটাও-এর পাতলা প্রিন্ট
মাথায় বাগান-খোঁপা, খোঁপায় হীরের প্রজাপতি
- আচ্ছা তাই হবে।
মেঘ সাজবে জরি-পাড় শাড়িতে
আর তখুনি নহবতখানার সানাই-এ জয়জ়য়ন্তী
আর তখুনি অরণ্যের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বনো জানোয়ারের হাঁক-ডাক
খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে জেগে উঠবে জলপ্রপাত
শিকারের জন্যে তীর ধনুক, দামামা দুন্দুভি
হাসছো কেন? বলো হাসছো কেন?
- তুমি এমনভাবে বলছ
যেন ভালোবাসা মানে সাপে আর নেউলে ভয়াবহ
একটা যুদ্ধ।
ভয় লাগছে।
অন্য গল্প বলো।


কথোপকথন ১৮


হ্যালো, হ্যালো, কখন আসছো তুমি?
কোথায় মেঘ? কোথাও মেঘ নেই।
হ্যালো, হ্যালো, বৃষ্টি যদি নামে?
ভিজবে, হ্যালো, ভিজবো, অনায়াসে
গাছপালারা যেমন করে ভেজে
ভিজলে তৃণ রাজার ছেলে হয়
হ্যালো, হ্যালো, বলছি ভিজবো জলে
ভেজা মাটির গন্ধ হবে তুমি
আমি তাতে ছড়াবো ডালপালা।
শুনতে পাচ্ছো? হ্যালো হ্যালো হ্যালো
বেড়িয়ে পড়, আকাশে রামধনু
উঠবে, হ্যালো, উঠবে এবার রোদ
রোদের হাতে বর্শা, হ্যালো হ্যালো
তোমার পায়ে ঘুঙুর শুনতে পেলে
সমস্ত মেঘ, আঁধার খসে হ্যালো
সমস্ত মেঘ, আঁধার হ্যালো হ্যালো
সমস্ত মেঘ, হ্যালো, হ্যালো হ্যালো।


কথোপকথন ২২


তেরোই জুলাই কথা দিয়েছিলে আসবে।
সেই মত আমি সাজিয়েছিলাম আকাশে
ব্যস্ত আলোর অজস্র নীল জোনাকি।
সেই মত আমি জানিয়েছিলাম নদীকে
প্রস্তুত থেকো, জলে যেন ছায়া না পড়ে
মেঘ বা গাছের। তেরোই জুলাই এলে না।
জ্বর হয়েছিল? বাড়িতে তো ছিল টেলিফোন
জানালে পারতে। থার্মোমিটার সাজতাম।
নীলিমাকে ছুঁয়ে পাখি হতো পরিতৃপ্ত।


কথোপকথন ২৩


নন্দিনী - কাল তোমাকে ভেবেছি বহুবার
	কালকে ছিল আমার জন্মদিন।
	পরেছিলাম তোমারই দেওয়া হার।
শুভঙ্কর - আমার হার কি আমার চেয়েও বড়?
	বালিকে তুমি বিলোলে আলিঙ্গন
	সমুদ্রকে দিলে না কুটো খড়ও।
নন্দিনী - আমার কী দোষ? ডেকেছি বহুবার
	কিন্তু তোমার এমন টেলিফোন
	ঘাটের মড়া, নেইকো কোনো সাড়।
শুভঙ্কর - বাতাস ছিল, বাতাস ছিল পাখি
	আকাশ ছিল, আকাশে ছিল চাঁদ
	তাদের বললে, খবর দিত নাকি?
নন্দিনী - আজ্ঞে মশাই, বলেছিলাম তাও।
	তারা বললে, ধুঁকছি লোডশেডিং-এ,
	নড়তে-চড়তে পারবো না এক পাও।


কথোপকথন ২৪


- তোমাকে আজাকাল এত রোগা লাগে কেন শুভঙ্কর?
খুব ম্রিয়মাণ লাগে
যেন ঘন বর্ষাকাল, মেঘের ধুসর ডানা, জল-কোলাহল
ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলেছে তোমাকে।
ভাঙা কোনো মন্দিরের পুরনো গন্ধের মতো লাগে।
অতীতকালের কোনো স্তম্ভে আঁটা শ্যাওলার মতো
অতীতে সবুজ ছিলে, এখন শোকের মতো হীন।
তোমাকে কি ঘিরে আছে কোন কারাগার?
গরাদের কালো হাত, ঘন বৃক্ষজাল?
অথবা তুমি কি কিছু হারিয়েছ, অত্যন্ত আপন কোন কিছু?
সন্ধ্যাতারা ডুবে গেলে কোনো কোনো পাখি শুধু কাঁদে।
তোমার সোনার আংটি জলের গহ্বরে ভেসে গেছে?
তোমার গায়ের সেই চাঁপা রঙ, চমৎকার শোভন প্রচ্ছদ
শুভঙ্কর কোথায় হারালে?

- নন্দিনী, তুমি তো জান আমার বাগান-পাট নেই,
যেটুকু বাগান ছিল শৈশবের সঙ্গে ঝরে গেছে।
তুমি ফুল ভালোবাসো বলে
তোমাকে ফুলের বৃন্তে মাঙ্গলিক উৎসবের মতো লাগে বলে
আমাকে ফুলের খোঁজে যেতে হয় পথ খুঁজে খুঁজে
সিন্ধুনদ, হিন্দুকুশ, হরপ্পার মতো দূরান্তরে।
সেই সব পথে বহু ভাঙাচোরা বিমানবন্দর
বহু যুদ্ধ জাহাজের হাড়-গোড়, মেশিনগানের
কঙ্কাল-কবর, রূঢ় কলকব্জা-কাঠ-কয়লা-খড়।
সেই সব পথে বহু পতাকার সার কিন্তু প্রাণচিহ্ন নেই।
দুরারোগ্য অসুখের শ্বাসকষ্টে বিদীর্ণ বাতাস
এবং পাথরও খুব, বড় বড় ডাকাতের মতন পাথর।
যেতে যেতে রক্তপাত হয়।
যেতে যেতে সর্বাঙ্গের উদ্যমে ও অভিলাষে, বাসনায়, বাহুতে, বল্কলে
নীল মরচে পড়ে।



বড়ে গোলাম (baRe golAm)

			p.179

ফুলের গন্ধে ফোটার জন্যে
নারীর স্পর্শ পাবার জন্যে
ঘুমের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে
	আমরা যেদিন যুবক হোলাম

বাইরে তখন বক্ষে বৃক্ষে
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে
আমাদের সেই কান্না নিয়ে
	গান গাইছে বড়ে গোলাম।

ফুলের কাছে নারীর কাছে
বুকের বিপুল ব্যথার কাছে
বেদনাবহ যে সব কথা
	বলতে গিয়ে ব্যর্থ হোলাম।

তারাই যখন ফিরে আসে
কেউ ললিতে কেউ বিভাসে
স্পন্দনে তার বুঝতে পারি
	বুকের মধ্যে বড়ে গোলাম।


পুর্ণেন্দু পত্রী : বড়ে গোলাম (purNendu patrI : baRe golAm)


ফুলের গন্ধে ফোটার জন্যে	 
নারীর স্পর্শ পাবার জন্যে
ঘুমের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে
	আমরা যেদিন যুবক হোলাম

বাইরে তখন বক্ষে বৃক্ষে
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে
আমাদের সেই কান্না নিয়ে
	গান গাইছে বড়ে গোলাম।

ফুলের কাছে নারীর কাছে
বুকের বিপুল ব্যথার কাছে
বেদনাবহ যে সব কথা
	বলতে গিয়ে ব্যর্থ হোলাম।

তারাই যখন ফিরে আসে
কেউ ললিতে কেউ বিভাসে
স্পন্দনে তার বুঝতে পারি
	বুকের মধ্যে বড়ে গোলাম।



অবনী বাড়ি আছো : শক্তি চট্টোপাধ্যায

	abanI bARi Achho :  shakti chaTTopAdhyAy p. 185


দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’

[Notes: legend has it that once at shAntiniketan, an inebriated shakti once
repeatedly knocked at a wrong house, shouting a name.

The poem poses a contrast between a calm neigbhourhood "where clouds roam
like calfs", grass grows green in the rain.  shattering this silence at
midnight comes the rattle of the door handle, and the piercing shout -
"abanI are you home?"]



পাতাল থেকে ডাকছি (pAtAl theke DAkchhi) : শক্তি চট্টোপাধ্যায


পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
এখন এসো, তোমার অমন আকাশ থেকে মাটির নিচে

এসে দাঁড়াও, আমার কাছে, আমার আঁচে পোড়াও দু’পা
দু'হাত পোড়াও, নরম ননীর মতন শরীর পুড়িযে কালো
কলুষ করো, আমায় ধরো... পাতাল বড়ো কষ্ট দিচ্ছে

চুড়ার থেকে শিকড় ধরে নামো আমার মুখের উপর
বুকের উপর, সুখের উপর, দুঃখভরা নখের উপর
যেন মাটির উপর থেকে আঁচড়ে মাটি নখ নিযেছে

পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
পাতাল থেকে ডাকছি, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
এখন এসো, তোমার একার আকাশ থেকে মাটির নিচে

এসে দাড়াও আমার কাছে, পাতাল বড়ো কষ্ট দিচ্ছে
আমার কাছে লুকিয়ে আছে তোমার জন্যে ভালোবাসা ।



যেতে পারি, কিন্তু, কেন যাবো? (Jete pAri, kintu kena JAbo?) : শক্তি চট্টোপাধ্যায--


       ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল

       এত কালো মেখেছি দু হাতে
       	এত কাল ধরে।
       কখনো তোমার ক'রে, তোমাকে ভাবিনি।

       এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
       চাঁদ্ ডাকে আয়, আয়, আয়।
       এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
       চিতা কাঠ ডাকে আয়, আয়, আয়।

       যেতে পারি,
       যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
       কিন্তু, কেন যাবো?

       সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো

       যাবো
       কিন্তু, এখনি যাবো না
       তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
       একাকী যাবো না অসময়ে।



সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় sunIl gangopAdhyAy



94 শুধু কবিতার জন্য (shudhu kabitAr janya, only for poetry)


শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভূবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু কবিতার
জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।



99 না-পাঠানো চিঠি (nA-pAThAno chiThi, unsent letter)


		[a woman, sold to a brothel for six thousand rupees,
		 writing to her mother]

মা, তুমি কেমন আছ?
আমার পোষা বেড়াল খুনচু সে কেমন আছে?
সে রাত্তিরে কার পাশে শোয়?
দুপুরে যেন আলি সাহেবদের বাগানে না যায়।
মা, ঝিঙে মাচায় ফুল এসেছে?
তুলি কে আমার ডুরে শাড়িটা পর়তে বোলো।
আঁচলের ফেঁসোটা যেন সেলাই করে নেয়।
তুলি কে কত মেরেছি! আর কোনদিন মারবো না।

আমি ভালো আছি। আমার জন্য চিন্তা কোরো না
মা, তোমাদের ঘরের চালে নতুন খর দিয়েছো?
এবারে বৃষ্টি হয়েছে খুব
তরফদার বাবুদের পুকুরটা কি ভেসে গেছে?
কালু-ভুলুরা মাছ পেয়েছে কিছু?
একবার মেঘের ডাক শুনে কৈ মাছ উঠে এসেছিল ডাঙায়
আমি আম গাছ তলায় দুটো কৈ মাছ ধরেছিলাম
তোমার মনে আছে, মা?
মনে আছে আলি সাহেবের বাগানের সেই নারকোল?
চুরি করে আনিনি! মাটিতে পড়েছিল, কেউ দেখেনি
নারকোল বড়ার সে স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

আলি সাহেবের ভাই মিজান আমাকে খুব আদর করতো।
বাবা একদিন দেখতে পেয়ে চেলা কাঠ দিয়ে
পিটিয়েছিল আমাকে। আমার কি দোষ,
কেউ আদর করলে আমি না বলতে পারি?
আমার পিঠে এখনো সে দাগ আছে।
আলি সাহেবদের বাগানে আর কোনদিন যাইনি।
আমি আর কোনো বাগানেই যাই না 
সেই দাগটায় হাত বুলিয়ে বাবার কথা মনে পড়ে।
বাবার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়
আমি ভালো আছি, খুব ভালো আছি
বাবা যেনো আমার জন্য একটুও না ভাবে।

তুলি কি এখনো ভুতের ভয় পায়, মা?
তুলি আর আমি পুকুর ধারে কলাবউ দেখেছিলাম
সেই থেকে তুলির ফিটের ব্যারাম শুরু হলো
দাদা সেই কলা গাছটা কেটে ফেললো
আমি কিন্তু ভয় পাই নি, তুলি কে কত খেপিয়েছি......
আমার আবার মাঝরাত্রে
সেই কলা বউ দেখতে ইচ্ছে করে।

হ্যাঁ, ভালো কথা, দাদা কোনো কাজ পেয়েছে?
নকুলবাবু যে বলেছিল, বহরমপুরে নিয়ে যাবে
দাদাকে বোলো আমি ওর উপরে রাগ করিনি
রাগ পুষে রাখলে মানুষের বড় কষ্ট
আমার শরীরে আর রাগ নেই,
আমি আর এক ফোঁটাও কাঁদি না
মা, আমি রোজ দোকানের খাবার খাই, পটল ভাজাও খাই
হোটেলে কিন্তু কখনো শাক রান্না হয় না|
পুকুর পাড় থেকে তুলি আর আমি
তুলে আনতাম কলমি শাক
কি ভালো, কি ভালো, বিনা পয়সায়
কোনোদিন আর কলমি শাক আমার ভাগ্যে জুটবে না|
জোর হাওয়া দিলে তাল গাছের পাতা শরশর করে
ঠিক বৃষ্টির মত শব্দ হয়।
এই ভাদ্দর মাসে তাল পাকে ডিব ডিব করে তাল পড়ে।
বাড়ির তাল গাছ দুটো আছে তো?
কালু তালের  বড়া বড় ভালবাসে, একদিন বানিয়ে দিও
তেলের খুব দাম জানি! তবু একদিন দিও

আমাকে বিক্রি করে দিয়ে ছ-হাজার টাকা পেয়েছিলে
তা দিয়ে একটা গরু কেনা হয়েছে তো?
সেই গরুটা ভালো দুধ দেয়?
আমার মতন মেয়ের চেয়ে গরুও অনেক ভালো
গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারের সুসার হয়
গরুর বাছুর হয়, তাতেও কত আনন্দ হয়!

বাড়িতে কন্যা সন্তান থাকলে কত জ্বালা!
দু'বেলা ভাত দাও রে, শাড়ি দাও রে,
বিয়ের জোগাড় করো রে|
হাবলু, মিজান, শ্রীধর দের থাবা থেকে  
মেয়েকে বাঁচাও রে।
আমি কি বুঝি না? সব বুঝি|  

কেন আমায় বিক্রি করে দিলে তাও তো বুঝি
সে জন্যই তো আমার কোনো রাগ নেই, অভিমান নেই।
আমি তো ভালোই আছি, খেয়ে পরে আছি।
তোমরা ওই টাকায় বাড়ি ঘর সারিয়ে নিও ঠিকঠাক।
কালু-ভুলু কে ইস্কুলে পাঠিও|
তুলিকে ব্রজেন ডাক্তারের ওষুধ খাইও।
তুমি একটা শাড়ি কিনো, বাবার জন্য একটা ধুতি
দাদার একটা ঘড়ির সখ, তা কি ও টাকায় কুলোবে?

আমি কিছু টাকা জমিয়েছি, সোনার দুল গড়িয়েছি।
একদিন কি হলো জানো মা?
আকাশে খুব মেঘ জমে ছিল,
দিনের বেলায় ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।
মনটা হঠাত কেমন কেমন করে উঠলো|
দুপুরবেলা চুপি চুপি বের়িয়ে ট্রেনে চেপে বসলাম
স্টেশনে নেমে দেখি একটা মাত্র সাইকেল রিক্শা!
খুব ইচ্ছে হলো একবার বাড়িটা দেখে আসি।
রথতলার মোড়ে আসতেই কারা যেন চেঁচিয়ে উঠলো-
কে যায়? কে যায়?
দেখি যে হাবুল-শ্রীধরদের সঙ্গে তাস খেলছে দাদা
আমাকে বললো, হারামজাদী, কেন ফিরে এসেছিস?
আমি ভয় পেয়ে বললাম,
ফিরে আসিনি গো, থাকতেও আসিনি
একবার শুধু দেখতে এসেছি
হাবুল বলল, এটা একটা বেবুশ্যে মাগী
কী করে জানলো বলো তো
তা কি আমার গায়ে লেখা আছে?
আর একটা ছেলে, চিনি না,
বললো, ছি ছি ছি, গাঁয়ের বদনাম!
হাবুল রিকশাওয়ালা কে চোখ রাঙিয়ে বললো, ফিরে যা
আমি বললাম, দাদা, আমি মায়ের জন্য ক’টা টাকা এনেছি
আর তুলির জন্য...
দাদা টেনে একটা চড় কষালো আমার গালে।
আমাকে বিক্রির টাকা হকের টাকা
আর আমার রোজগারের টাকা নোংরা টাকা
দাদা সেই পাপের টাকা ছোঁবে না, ছিনিয়ে নিল শ্রীধর
আমাকে ও দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল।

আমি তবু দাদার ওপর রাগ করিনি
দাদা তো ঠিকই করেছে,
আমি তো আর দাদার বোন নই,
তোমার মেয়ে নই, তুলির দিদি নই
আমার টাকা নিলে তোমাদের সংসারের অকল্যাণ হবে
না, না আমি চাই তোমরা সবাই ভালো থাকো
গরুটা ভালো থাকুক, তালগাছ দুটো ভালো থাকুক
পুকুরে মাছ হোক, ক্ষেতে ধান হোক,
ঝিঙে মাচায় ফুল ফুটুক
আর কোনোদিন ঐ গ্রাম অপবিত্র করতে যাবো না

আমি খাট-বিছানায় শুই, নীল রঙের মশারি,
দোরগোড়ায় পাপোশ আছে, দেওয়ালে মা দুর্গার ছবি
আলমারি ভর্তি কাচের গেলাস।
বনবন করে পাখা ঘোরে। সাবান মেখে রোজ চান করি
এখানকার কুকুরগুলো সারা রাত ঘেউ ঘেউ করে
তাহলেই বুঝছো, কেমন আরামে আছি আমি?

আমি আর তোমার মেয়ে নই, তবু তুমি আমার মা
তোমার আরও ছেলেমেয়ে আছে
আমি আর মা পাবো কোথায়?
সেইজন্যই তোমাকে চিঠি লিখছি, মা
তোমার কাছে একটা খুব অনুরোধ আছে
তুলিকে একটু যত্ন করো, ও বেচারি বড় দুর্বল।
যতই অভাব হোক, তবু তুলিকে তোমরা...
তোমার পায়ে পড়ি মা, তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বলো,
তুলিকেও যেন আমার মতন আরামের জীবনে না পাঠায়
যেমন করে হোক, তুলির একটা বিয়ে দিও|
ওর একটা নিজস্ব ঘর সংসার, একজন নিজের মানুষ।
আর যদি কোনোরকমই ওর বিয়ে দিতে না পারো?
ওকে বলো গলায় দড়ি দিয়ে মরতে
মরলে ও বেঁচে যাবে



147 উড়ন্ত সব জোকার (srIjAta : uRanta sab jokAr, flying jokers all)


আকাশ বড় কৃপাসিন্ধু । ঝাকাস রোদে উড়ন্ত সব জোকার
বেকার ছিলাম অ্যাদ্দিন, আজ কাজ পেয়েছি গায়ের গন্ধ শোঁকার

নতুন-নতুন ছেলেমেয়ের শরীর কেমন গোছানো, ফুরফুরে
পাক ধরেছে দাবার ছকে, ডাক পড়েছে যাবার, দূরে-দূরে

ট্রাম-বাসে খুব ঝক্কি। তাও লক্ষ্মীছেলের ভাব করে ভীড় ঠেলি
বাতাস বড় করুনাময়। সাতাশ বছর পাঁউরুটিতে জেলি

পার করে আজ হ্যামবার্গার । ঘ্যাম বেড়েছে শ্যামসোহাগী রাধার
ঘুম আসেনা। বালিশ থেকে নালিশ জানায় রংবেরঙের ধাঁধা

জীবন তবু প্রেমদিওয়ানা। পাহাড়ি পথ... পিছু নিয়েছে পুলিশ...
এবং গাড়ি ধাক্কা খাবেই। স্বপ্ন ভাঙবে গম্ভীর আব্বুলিশ

উঠে দেখব ছাঁটাই হওয়া দেবদূতেরা জল মেশাচ্ছে বিষে
কিন্তু করার কিচ্ছুটি নেই। অ-এ অজগর ঘুমোচ্ছে কার্নিশে -–

ঘুমোক। ওকে ডাকব না আর। রাখব না আর কারোর কোনও কথা
দরজাগুলো আটকাবো আর ধাক্কাব আর পাক খাব অযথা

চলার পথা কলার খোসা। গলায় তবু কলার তোলা রোয়াব
রামছাগলের গামছা খোলায় ব্যস্ত থাকুক আমার যত খোয়াব

খেয়াল ঢাকুক ঠুমরি দিয়ে, দেয়াল ঢাকুক মিষ্টি পানের পিকে
কী ভাববে কে জানে, আমি কাব্যে নামাই বন্ধুর ছাত্রীকে

বেড়াল শুকোক ছাদের তারে। হাতের মুঠোয় ছুটে মরুক ইঁদুর
ছিটকে এসে জামায় লাগুক একের পর এক বান্ধবীদের সিঁদুর--

ভ্রুক্ষেপ করছি না। আমার প্রেমদিওয়ানা জীবন তো ঝকমকে,
উড়ন্ত সব জোকার, তাদের নোংরা পালক ছড়িয়ে আছে রকে...

আস্তে-আস্তে কুড়োই, কিন্তু ফুরোই না এই অসভ্যতার খেলায়
সিঁড়ির মুখে বিড়ি ধরাই, ছিরির লড়াই গুরুতে আর চ্যালায়

ধুশ্‌শালা- সব ফালতু। ওসব ধান্দাবাজির বান্দা আমি নই
মুখের ওপর দরজা বন্ধ, বুকের ওপর উল্টে রাখা বই...

দিনের পরে দিন যে গেল একইরকম বৈশাখে-আশ্বিনে
আবার ভাবি মদ খাব না। আবার গড়াই ভদকা থেকে জিনে

মন্দেভালোয় সন্ধে কাটে। সকাল থেকেই চলছে ঢুকুঢুকু
ব্যাঙ পালাল ছিপ হাতিয়ে, ঠ্যাঙ তুলেছে নিজের পোষা কুকুর

কিন্তু আমি ঘুমোচ্ছি। দু’চোখ থেকে খসে পড়ছে তারা
ঘুমের ভেতর মুখ বাড়াচ্ছে গোটাদুয়েক খাপছাড়া চেহারা

‘জীবন কিন্তু প্রেমদিওয়ানা, সাবধানে তার গায়ের গন্ধ শুঁকো—‘
বলছে আমায় উড়ন্ত দুই পাগলা জোকার – দেরিদা আর ফুকো।



145 এক বিকেলের কথা (ek bikeler kathA, this afternoon)


আজ অন্তত ঘড়ির দিকে তাকাস না,
টুকরো করে উড়িয়ে দে সব সমস্যা --
চিন্তা তোকে মানায় না। দ্যাখ, আকাশ লাল

আজ অন্তত ফিরিস না ভিড় মেট্রোতে
ট্রাম চড়ব, ঘুরবে চাকা ঝমরঝম...
দু'জনে খুব গন্ধ নেব রেড রোডের

আজ অন্তত চুল খুলে দে দিগ্বি‌দিক
ডাইনে-বাঁয়ে লোকগুলো সব মূর্ছা যাক
ইচ্ছে ক'রে মিথ্যে কথার দিব্যি দিই

আজ অন্তত রাস্তা পেরোই হাত ধ'রে
তুই একবার সাধলেই জোর ফুচকা খাই,
কান টেনে বল -- ' ইস, কী আমার বাধ্য রে --'

আজ অন্তত বলিস না সব গল্প শেষ
হয়ত শুরুই হয়নি কোনও রূপকথা...
ওই তো, একটা একলা চেয়ার। চল, ব'সে

আমার নতুন লেখা শোনাই খানতিনেক
বাকিজীবন অশান্তিতে ভুগব, তাও
আজ অন্তত,
                  আজ অন্তত,
          আজ অন্তত আমার কাছে শান্তি নে -- !




সুচীপত্র (Contents)


রবীন্দ্রনথ ঠাকুর (rabIndranath ThAkur [Tagore])

 1 সোনার তরী	sonAr tarI 					       
 2 ঝড়ের খেয়া	jhaRer kheYA
 3 ঝুলন	jhulan
 4 জীবনদেবতা	jIban_debatA
 5 ব্রাহ্মণ	brAhmaN
 6 আমি	Ami
 7 পৃথিবী	prithibI

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (dvijendralAl rAY)

 8 নন্দলাল	nandalAl 					       
 9 বিলেত ফেরতা	bilet fer_tA
 10 কৃষ্ণরাধিকা-সংবাদ	kriShNarAdhikA-saM_bAd

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (satyendranAth datta)

 11 দূরের পাল্লা	dUrer pAllA 				       
 12 ইলশে গুঁড়ি	ilshe gu.NRi

সুকুমার রায় (sukumAr rAY)

 13 জীবনের হিসাব	jIbaner hisAb 				       
 14 আবোল তাবোল	Abol tAbol
 15 একুশে আইন	ekushe Ain 					       

জীবনানন্দ দাস (jIbanAnanda dAs)

 16 বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি	bAM_lAr mukh Ami dekhiYAchhi 	       
 17 আবার আসিব ফিরে	AbAr Asiba fire
 18 বনলতা সেন	banalatA sen
 19 অন্ধকার	andhakAr
 20 আট বছর আগের এক দিন	AT bachhar Ager ek din
 21 সুচেতনা	suchetanA

কাজী নজরুল ইসলাম (kAjI naj_rul is_lAm [kazi nazrul islam])

 22 বিদ্রোহী	bidrohI 					       
 23 সৃষ্টি সুখের উল্লাসে	sriShTi sukher ullAse
 24 আমার কৈফিয়ৎ	AmAr kaifiYa.t
 25 বিজয়িনী	bijaYinI
 26 আগমনী	AgamanI
 27 রক্তাম্বর ধারিণী মা	raktAmbar dhAriNI mA

অমিয় চক্রবর্তী (amiYa chakrabartI, 1901-1986)

 28 চেতন স্যাকরা	chetan syAk_rA 				       
 29 চিরদিন	chiradin
 30 সংগতি	saM_gati

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (sudhIndranAth datta)

 31 শাশ্বতী	shAshvatI 					       

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (achintyakumAr sengupta, 1903-1976)

 32 উদ্বাস্তু	udvAstu 					       
 33 ছন্নছাড়া	chhannachhARA 					       
 34 পূর্ব পশ্চিম	pUrba pashchim 					       

প্রেমেন্দ্র মিত্র (premendra mitra 1904-1988)

 35 ফেরারী ফৌজ	ferArI fauj 				       
 36 ঝড় যেমন ক'রে জানে অরণ্যকে	jhaR Jeman ka're jAne araNyake
 37 নীলকন্ঠ	nIlkanTha
 38 নৌকো	nauko
 39 হারিয়ে	hAriYe

বুদ্ধদেব বসু (buddhadeb basu)

 40 আমন্ত্রণ -- রমাকে	AmantraN -- ramAke 			       
 41 কবিমশাই	kabimashAi
 42 এলা-দি	elA-di
 43 হাওয়ার গান	hAoYAr gAn

বিষ্ণু দে (biShNu de)

 44 তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ	tumi shudhu pa.Nchishe baishAkh
 45 ঘোড়সওযার	ghoRsaoyAr

সুভাষ মুখোপাধ্যায় (subhASh mukhopAdhyAY 1919-2003)

 46 ঘোষণা	ghoShaNA
 47 মিছিলের মুখ	michhiler mukh
 48 মেজাজ	mejAj
 49 সালেমানের মা	sAlemAner mA
 50 ফুল ফুটুক না ফুটুক	ful fuTuk nA fuTuk

বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায (bIrendra chaTTopAdhyAy 1920-1985)

 51 রাজা আসে যায়	rAjA Ase JAY 				       
 52 হওযা না-হওযার গল্প	haoyA nA-haoyAr galpa
 53 রাস্তা কারও একার নয়	rAstA kAr_o ekAr naY
 54 কালো বস্তির পাঁচালি	kAlo bastir pA.NchAli
 55 প্রভাস	prabhAs
 56 তিন পাহাড়ের স্বপ্ন	tin pAhARer svapna

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (nirendranAth chakrabartI 1924-)

 57 আবহমান	AbahamAn 					       
 58 অমলকান্তি	amalkAnti
 59 কলকাতার যিশু	kalkAtAr Jishu
 60 কলঘরে চিলের কান্না	kalghare chiler kAnnA
 61 একটাই মোমবাতি	ekTAi mombAti
 62 মাটির হাতে	mATir hAte

সুকান্ত ভট্টাচার্য (sukAnta bhaTTAchArJa 1926-1947)

 63 প্রিয়তমাসু	priYatamAsu 					       
 64 বোধন	bodhan

কবিতা সিংহ (kabitA siMha [sinha] 1931-1999)

 65 ঈস্বরকে ঈভ	Isvarke Ibh					       
 66 বাবু হে ফুলবাবু হে	bAbu he fulbAbu he
 67 দেবব্রত বিশ্বাস	debabrata bishvAs
 68 নীহারিকাপুঞ্জ	nIhArikApu~nja

শঙ্খ ঘোষ (sha~Nkha ghoSh)

 69 যমুনাবতী	JamunAbatI 					       
 70 বলো তারে 'শান্তি শান্তি'	balo tAre 'shAnti shAnti'
 71 আড়ালে আড়ালে	ARAle ARAle
 72 বাবুমশাই	bAbumashAi

পুর্ণেন্দু পত্রী (purNendu patrI)

 73 কথোপকথন-১ 	kathopakathan-1				       
 74 কথোপকথন-৪ 	kathopakathan-4
 75 কথোপকথন-৭ 	kathopakathan-7
 76 কথোপকথন-৮ 	kathopakathan-8
 77 কথোপকথন-৯ 	kathopakathan-9
 78 কথোপকথন-১০	kathopakathan-10
 79 কথোপকথন-১৩	kathopakathan-13
 80 কথোপকথন-১৮ 	kathopakathan-18
 81 কথোপকথন-২২ 	kathopakathan-22
 82 কথোপকথন-২৩	kathopakathan-23
 83 কথোপকথন-২৪ 	kathopakathan-24
 84 বড়ে গোলাম   	baRe golAm
 85 যে টেলিফোন আসার কথা	Je Telifon AsAr kathA
 86 সরোদ বাজাতে জানলে	sarod bAjAte jAnle
 87 সেই গল্পটা   	sei galpaTA

শক্তি চট্টোপাধ্যায (shakti chaTTopAdhyAy)

 88 অবনী বাড়ি আছো	abanI bARi Achho 			       
 89 আনন্দ-ভৈরবী	Ananda-bhairavI
 90 পাতাল থেকে ডাকছি	pAtAl theke DAkchhi
 91 যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?	Jete pAri, kintu kena JAbo?
 92 টিলার উপর সেই বাড়িটির কথা	TilAr upar sei bARiTir kathA

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (sunIl ga~NgopAdhyAY)

 93 হঠাৎ নীরার জন্য	haThA.t nIrAr janya 			       
 94 শুধু কবিতার জন্য	shudhu kabitAr janya
 95 কবির মৃত্যু : লোরকা স্মরণে	kabir mrityu : lorkA smaraNe
 96 কেউ কথা রাখেনি	keu kathA rAkheni
 97 উত্তরাধিকার	uttarAdhikAr
 98 ভারতবর্ষের মানচিত্রের উপর দাঁড়িয়ে	bhAratbarSher mAnchitrer upar dA.NRiYe
 99 না-পাঠানো চিঠি	nA-pAThAno chiThi

অমিতাভ দাশগুপ্ত (amitAbha dAsgupta)

100 আমার নাম ভারতবর্ষ	AmAr nAm bhAratbarSha 			       
101 কাল সারারাত	kAl sArArAt
102 শেষ ঘোড়া	sheSh ghoRA

সব্যসাচী দেব (sabyasAchI deb)

103 বেহুলা ভাসান	behulA bhAsAn 				       
104 কৃষ্ণা	kriShNA
105 কর্ণ	karNa
106 চণ্ডালিকা	chaNDAlikA
107 অনাটকীয়	anATakIYa

কৃষ্ণা বসু (kriShNA basu b.1947)

108 একলা মেয়ে	eklA meYe 					       
109 ভরা বর্ষার গান	bharA barShAr gAn
110 রাধিকা সংবাদ	rAdhikA saMbAd
111 মা আর মেয়ের সংলাপ	mA Ar meYer saMlAp

শুভ দাশগুপ্ত (shubha dAsgupta)

112 আমিই সেই মেয়ে (এক)	Ami_i sei meYe (1) 		       
113 আমিই সেই মেয়ে (দুই)	Ami_i sei meYe (2)
114 দিদি	didi
115 প্রেম	prem
116 আমি সুভাষ	Ami subhASh
117 ফিরে এসো আগুন	fire eso Agun

জয গোস্বামী (jay gosvAmI b.1954)

118 মেঘবালিকার জন্য রূপকথা	meghbAlikAr janya rUpakathA 	       
119 মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়	mAlatIbAlA bAlikA vidyAlaY
120 জল হাওয়ার লেখা	jal hAoYAr lekhA
121 পাঁচালি : দম্পতিকথা	pA.NchAli : dampatikathA
122 টিউটোরিয়াল	TiuToriYAl
123 মেঘ বলতে আপত্তি নেই	megh balte Apatti nei
124 কবন্ধের চোখ	kabandher chokh

ব্রত চক্রবর্তী (brata chakrabartI)

125 আগুনের মাঝখানে	Aguner mAjhkhAne 			       
126 কোনো দম্পতিকে	kono dampatike
127 পিকনিক	piknik
128 ঘোষপাড়ার বিদ্যাসাগর	ghoShpARAr vidyAsAgar

সুবোধ সরকার (subodh sarkAr 1958-)

129 বেহালার ছেলেটা	behAlAr chheleTA 			       
130 আমেরিকা ই সেপ্টেম্বর	AmerikA 11i sepTembar
131 শাড়ি	shARi
132 কাদম্বরী দেবী, আপনাকে	kAdambarI debI, ApnAke
133 ঘুষ	ghuSh
134 সীতা	sItA
135 লক্ষ্মী	lakShmI
136 ভালো যায়গাটা কোথায়	bhAlo JAYgATA kothAY

মল্লিকা সেনগুপ্ত (mallikA sengupta 1960-2011)

137 নান্দীমুখ	nAndImukh 					       
138 গঙ্গাজন্ম	ga~NgAjanma
139 দ্রৌপদীজন্ম	draupadIjanma
140 মেধাজন্ম	medhAjanma
141 পালিয়ে আসা বৌয়ের চিঠি	pAliYe AsA bauYer chiThi
142 আপনি বলুন, মার্কস	Apni balun, mArx

শ্রীজাত (shrIjAta 1975-)

143 'কী আমার পরিচয়, মা?'	'kI AmAr parichaY, mA?'		       
143 ছেড়ে যাওয়া	chheRe JAoYA
144 তিন দিয়ে গুণ, দুই দিয়ে ভাগ	tin diYe guN, dui diYe bhAg
145 এক বিকেলের কথা	ek bikeler kathA
146 কিছু প্রেম, কিছু বিচ্ছেদ	kichhu prem, kichhu bichchhed
147 উড়ন্ত সব জোকার	uRanta sab jokAr
148 রঞ্জিনীকে লেখা আমার চিঠি	ra~njinIke lekhA AmAr chiThi
149 আমাদের বনলতা	AmAder banalatA
150 অপেক্ষা	apekShA
151 দয়া করো	daYA karo
152 মেঘদূত	meghadUt
153 বর্ষামঙ্গল	barShAma~Ngal


(কবি ও কবিতা: আলেখ্য) (kabi o kabitA: Alekhya)

সৃষ্টির মুহূর্ত	sriShTir muhUrta 			       345
আবৃত্তি তখন, আবৃত্তি এখন	Abritti takhan, Abritti ekhan        357



bookexcerptise is maintained by a small group of editors. get in touch with us! bookexcerptise [at] gmail [dot] .com.

This review by Amit Mukerjee was last updated on : 2015 Sep 11